নারগিস পারভীনঃ
প্রশ্নঃ একেশ্বরের কাছে সন্তান সেখানে এক তবে পরিবার /সমাজের কাছে কেন এতো বিভেদ।
পৃথিবী সৃষ্টির হাজারও রহস্য উন্মোচনে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে প্রতিনিয়ত সভ্যতার দিকে এগিয়ে চলছে। সভ্যতাকে সাজাতে-গােছাতে পুরুষ দিয়েছে শ্রম। আর তাতে সর্বদা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নারী।কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত হয়ে আসছে। এ বৈষম্যের অবসান হওয়া প্রয়ােজন। অন্তরালের অধিকাংশ পুরুষেরা নারীদেরকে প্রতিদন্দি হিসেবে মনে করে। শুধু পুরুষেরাই নয় নারীরাও নারীদের সে ভাবেই ট্রিট করে।পুরুষের শৌর্য-বীর্য আর নারী হৃদয়ের সৌন্দর্য, প্রেম-ভালােবাসার সম্মিলনেই বিশ্বের সকল উন্নতি সাধিত হয়েছে।
কবির ভাষায় বলতে হয়ঃ-
“”বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”
সৃষ্টি কর্তার এই জগৎ এ নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন একে অপরের পরিপূরক হিসেবে। পৃথিবীতে সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর থেকে শুরু হয় নারী ও পুরুষের মধ্যে অবিবেচক বৈশম্য। ছোট বেলায় দেখতাম ছেলে সন্তান জন্ম নেবার সাথে সাথে হৈচৈ পড়ে যায় গ্রামে, বংশের প্রদীব এসেছে আজান দে,কিন্তু কন্যা সন্তানের বেলা হয় মন ভার। বাবা মায়ের আনন্দের ফসল হিসেবে মায়ের গর্ভে আসে সন্তান। সৃষ্টি কর্তার অপার মহিমা আর অনুগ্রহের চাদরে মুরে ধীরে ধীরে একই খাবার খেয়ে একই মায়ের গর্ভে বেড়ে উঠে সন্তান। মৃত্যু যন্ত্রণার সাথে পাল্লা দিয়ে মা জন্ম দেন একটি সন্তান, আর তাঁর সাথে সাথে প্রকাশিত হয় পরিবারে রাম রহিম বা অলক্ষির বিভেদ।
পরিবার ও সমাজের কটাক্ষ চোখ থেকে গুটি কয়েক নারীরা রেহাই পেলেও প্রতিনিয়ত লালস্য অমানবিক পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করছে হাজার হাজার নারীরা। জীবনে বেঁচে থাকার তাগিতে পুরুষের পাশাপাশি ছুটছে নারীর দল। একজন পুরুষ যখন কাজের সন্ধানে বের হয় আরও দশ জন তার পথ সহজ করে দেয় ভাই ব্রাদার হিসেবে, সেখানে একজন নারী যদি কাজের সন্ধানে বের হয় দশ জনের মধ্যে ভাগ্যক্রমে একজন তাঁর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আর বাঁকি ৯ জন তাঁর দূর্বলতার সুযোগ নিতে চাই। এমনই কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা ঃ ১ঃ- এক মোটরসাইকেল রাইডার, নাম হৃদয় (ছব্দ নাম)।
আমি একজন ডিজাইনার, একটা হাউসে ডিজাইন করতাম, হঠাৎই চাকরী চলে যায় আমার সংসারের চাকা প্রায় অচলের পথে। আমার একটা বাইক আগের থেকেই ছিল এবং চালক হিসেবে মন্দ না। ভাই ব্রাদারদের কাছে বললাম তাঁরা আমাকে একটা হাউজের ঠিকানা দিল এবং পার্টাইম রাইড সিয়ারের পরামর্শ দিল। আমিও মাঠে নেমে পারলাম তবে পথ ঘাট তেমন কিছু চিনি না, আর কেমনে শুরু করবো বুঝতেও পারছি না। আল্লাহর নাম নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। ইসিজি চত্বরের একটা মোরে দাঁড়িয়ে পরলাম। অনেকেই জানলেন আমি নতুন এই পেশায়। বন্ধুর মতো তাঁরা নিজেরাই আমাকে প্রথম একজন গ্রাহকও ঠিক করে দিলেন।
১” সংসারের বেহাল দশা ইতির (ছব্দ নাম) বয়স আনুমানিক ২৯-৩৪ এর মধ্যে। স্বামী নেশাগ্রস্তর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত ঘরে তাঁর দুই সন্তান, আরেক সন্তান তাঁর গর্ভে। গরীব ঘরের মেয়ে বলে অল্প বয়সে বাবা বিয়ে দিবার কারনে তেমন পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি, কোন রকমে ৮ম শ্রেণী পাশ করছে। বিয়ের পর থেকে গার্মেন্টস খেটে সংসার জীবনে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। স্বামীকে একটা মোবাইল সার্ভিসং এর দোকান করে দিয়েছে। দীর্ঘ দিন গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য চোখে তেমন ভালো দেখতে পায় না। তাই চাকরী করার সুযোগ নেই। এর মধ্যে স্বামীর হঠাৎ পরকীয়ার কারনে ঘরে এখন হাহাকার চলছে।
২” ডিভোর্স হওয়ার মিতু (ছব্দ নাম) হয়েছে সমাজের বৈষম্যের শিকার। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের দায় টা দেন তাঁর নিজেরই পরিবার। পাত্রটা ছিল বাবার পছন্দের। সেজন্য মিতুর সাথে তাঁর পরিবারের কেউ ভালো ব্যবহার করেন না। পরিবার থেকে বের হয়ে শুরু করেন এক নতুন জীবন সংগ্রাম। চাকুরী সন্ধানে বের হয়ে বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতাও হয় তার। যার মধ্যমেই যাক না কেন অফিসের কর্মকর্তা কাজের সুবাদে দূর্বলতা আগে খোঁজে। সৎ ভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজের সন্ধান ছুটে চলা মিতুর ভাগ বরাবরই কমই জোটে। কারন পুরুষেরা পুরুষের পাশে থাকে নারীর পাশে না। অসহায়ত্ব নিয়ে জীবন সংগ্রামে না মরে বেঁচে আছে এরকম হাজারও ইতি, মিতুর জীবন। যার খবর কেউ রাখে না।
নারী ও পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে।
যে সমাজের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা নারী সে সমাজে নারীকে উপেক্ষা করে কোনাে প্রকার উন্নতি সাধন করা সম্ভব নয়। পারিবারিক জীবনেই নয়,
কর্মজীবনেও নারী জাতিকে সম্মান দিতে হবে। মানব সভ্যতা গড়ার পেছনে নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে কম নেই। সভ্য
সমাজ,সংসার গড়তে নারী ও পুরুষের সমান অবদান, সম্মান প্রয়ােজনী।
Leave a Reply