নিজস্ব প্রতিবেদক:-
আমরা গণতন্ত্রের জন্য চিল্লাই সেই বহুদিন ধরে। ১৯৪৭ এ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই আমরা গলা ফাটাইয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলছি। কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি গণতন্ত্র কি, কার জন্য এবং কি ভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়! আমরা নিজেরা গণতন্ত্র কতটুকু বুঝি! পশ্চিমা বিশ্বের মনীষীদের গণতন্ত্রের কতগুলো সংজ্ঞা তোতাপাখির মতো গিলে তা আওরাতে থাকি। বলাবাহুল্য এখানে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যও গলদঘর্ম পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমাদের সমাজে আদৌ কোনোদিন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে কি হবেনা তাও তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। একসময়ে আমাদের দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দলগুলো বেশ তৎপর ছিলো।এখন তাদের অবস্থান হিমাঙ্কের কাছাকাছি।
যাহোক, যা বলছিলাম গণতন্ত্র নিয়ে। একটা দেশের আবহাওয়া ভূ-প্রকৃিতির প্রভাব প্রতিফলিত হয় সেদেশের মানুষের বা জনগোষ্ঠীর উপর। ভূ-প্রকৃতিগত কারনেই এদেশের মানুষ বহুচিন্তার, বহুরূপী। ছোট্ট একটি ভূখণ্ড কিন্তু জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ভরকে যাওয়ার মতো।এখানে হাজার বছরেও জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠেনি। ছোট্ট একটি দেশ হলে হবেকি- এখানে বহুমত আর বহুপথের লোক যেমন আছে ঠিক তেমনই ধর্মান্ধ লোকও বেশ কিছু বর্তমান।
আমাদের বোধ থেকে গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে।পশ্চিমা আদলে চাইলে তা কখনোই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। বুড়িগঙ্গা পানি শুকিয়ে গেছে। পদ্মা মেঘনায় আগের মতো স্রোত বহে না। আগের মতো এখন কেউ জীবন দিতে চায় না। সাধারণ মানুষ এখন একটু শান্তি চায় – জীবন জীবিকা করে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চায়।
রাজনীতিবিদের দেশ পরিচালনা করার কথা- দেশ নিয়ে ভাবার কথা। কিন্তু এখন আর রাজনীতিতে ভালো মানুষ, মেধাসম্পন্ন মানুষ নাই। দুষ্ট – তষ্কর লোকের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যে কারনে রাজনীতির মূল চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। সমসজে মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রকট আকার ধারন করেছে। আগামীতে আমাদের সমাজ কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে তা ভাবতে গেলে শিহরিত হতে হয়।
একসময় রাজনীতি ছিলো সমাজকে দেয়ার, কল্যাণকর কিছু করার।সমাজ বা রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করাই ছিলো রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য। এখন দেখছি যারা রাজনীতিতে আসেন রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হন।তাদের মধ্যে ন্যায়- নীতির বালাই নাই।তারা যা করেন তা-ই বৈধ, আইনসিদ্ধ।
এরা কেউ যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় যান তখনতে কোনো কথাই নাই। তারা দেশের টাকা বিদেশ নিয়ে যায়।সেখানেই তারা সেকেন্ড হোম গড়ে তোলেন। পাকিস্তান আমলের কথা বলি- এই ভূখণ্ডের মূখ্য মন্ত্রী ছিলেন।তার নামটা আজ নাই-বা বল্লাম ওনি ঢাকাতে একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।তার লাশটা গ্রামের বাড়ীতে নিতে হবে কিন্তু সে খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য তার পরিবারের ছিলো না।শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় সুসম্পন্ন হয়।
আমাদের রাষ্ট্র শাসনের যোগ্যতা আছে কি-না একবারও তা ভাবি না কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত সময় পার করছি।এবং কেউ কেউ সফলও হই।এই অযোগ্য লোক রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার ফলে যা হবার তাই এখন হচ্ছে। একদিকে দুঃশাসন আর দুর্নীতিতে দেশ নিমজ্জিত অপরদিকে অসুস্থ রাজনীতির চর্চা।
যারা রাজনীতি করতেন তাদের একটা চরিত্র ছিলো। তাদের জনগণের কাছে ম্যান্ডেট ছিলো বা তাদের কাছ থেকে ম্যান্ডেট নিতেন। এখন আার তা প্রয়োজন হয় না। কিছু কিছু রাজনীতিকদের (?) দ্বিচারিতা দেখে আমি বিস্ময় প্রকাশ না করে পারছি না। তাদের কারনে আজ আমাকে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান এবং সমাজ জনগণ ও রাষ্ট্রের কাছে একটু দায়বদ্ধ থাকায় বিবেকের দংশনে আজ কিংকর্তব্য বিমূঢ়।
যারা রাজনীতি করি তাদের প্রথমেই ভালো চরিত্রের অধিকারী ও কমিটেড হতে হবে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের মধ্যে গণতান্ত্রিক বোধ ও পরস্পরের মধ্যে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আমি রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে না পারলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে না এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। যে- ই রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাকনা কেন তাকে সহযোগিতা করতে হবে। পাশাপাশি নিজনিজ দলীয় কর্মসূচি পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে দেশ কারো একার সম্পত্তি নয় বা একটি দলের সম্পত্তি নয় যে এর দেখভাল করার দায়িত্ব তার বা সেই দলের। আমাদের সংবিধানে পরিষ্কার লেখা আছে এর মালিকানা জনগণ অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ।
মেহেদী হাসান হাওলাদার
সহ সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম।
নিউজ ডেক্স।
Leave a Reply