রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। শীতের আগমন ও ঘন কুয়াশাকে পুঁজি করে ভারতের কাটাতার বিহীন বিভিন্ন এলাকা দিয়ে গরু পারাপারের সিন্ডিকেট বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যার কারনে প্রতিনিয়ত ঘটছে সীমান্তে হত্যা।
ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে প্রায় প্রতিদিন গরুসহ মাদক পাচার করে আসছে চোরাকারবারি চক্র। শীতের ঘন কুয়াশা আসলেই বেড়ে যায় চোরাকারবারি। রাত হলেই সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে চোরাকারবারিদের আনাগোনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। রাতভর সীমান্ত হয়ে বিভিন্ন পন্য আনা নেয়া করে এ চক্রটি, যার কারণে কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে সীমান্তে হত্যার সংখ্যা।
জানা যায়, লালমনিরহাট ২৫.৪৮ ডিগ্রি থেকে ২৬.২৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৮ ডিগ্রি থেকে ৮৯.৩৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে জেলাটির অবস্থান। জেলার উত্তরে অবস্থিত ভারতের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি, দক্ষিণে রংপুর, পূর্বে কুড়িগ্রাম ও ভারতের কোচবিহার, এবং পশ্চিমে রংপুর ও নীলফামারী জেলা।
এছাড়াও জেলাটি ঘিরে রয়েছে কয়েকটি নদনদী। উত্তরে ধরলা ও দক্ষিনে তিস্তা নদী। সীমান্তবর্তী কাঁটাতারের বেড়াবিহীন ৭৪ কিঃমিঃ রয়েছে উম্মুক্ত। সীমান্ত উন্মুক্ত থাকায় এই দূর্বলতার সুযোগ ও ঘন কুয়াশার ফলে ভারতীয় এবং বাংলাদেশি গরু পাচারকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন শতশত ভারতীয় গরু বিভিন্ন হাট বাজারে দেশী গরুর সাথে মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে।
জেলাটিতে সর্বমোট ২৮৫ কিঃ মিঃ ভারতীয় সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্তের মধ্যে প্রায় ৭৪ কিঃমিঃ কাঁটাতারের বেড়াবিহীন। কাঁটাতারের বেড়াবিহীন সীমান্তগুলো দহগ্রাম, দৈইখাওয়া, কালীগঞ্জ, চাপারহাট, গোড়ল, কুটিয়ামঙ্গল, দূর্গাপুর ও মোগলহাট। এসব সীমান্ত ছাড়াও চোরাই পথ দিয়ে প্রতিনিয়ত আসছে ভারতীয় গরু। এসব গরু অবাধে বিক্রি হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলার কাঁঠাল বাড়ী, সদর উপজেলার বড়বাড়ি ও জেলার কালীগঞ্জ শিয়াল খোয়া, হাতিবান্ধা'র চামটা, চাপারহাট, আদিমারীর দুরাকুটি সহ বিভিন্ন হাটে।
চোরাই পথে আসা ভারতীয় গরু গুলো স্হানীয় হাট-বাজার ছাড়াও প্রকাশ্য ট্রাক ভর্তি করে পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
একটি সূত্র জানায়, লালমনিরহাট ২৮৫ কিঃমিঃ সীমান্তে ১৫ বিজিবি, রংপুর ৫১ বিজিবি ও রংপুর ৬১ বিজিবি দায়িত্ব পালন করে আসছে। সীমান্তে কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে পৃথক পৃথক তিনটি ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন করছে। আইন শৃংখলা বাহিনী তল্লাশীতে গিয়ে হাটের স্লীপ দেখে ফিরে আসে। প্রকৃত অর্থে এটা অযুহাত মাত্র। এক জোড়া ভারতীয় গরু পাচার হয়ে আসলে সীমান্ত রক্ষীবাহিনী, অন্যান্য বাহিনী, রাজনৈতিক কর্তাগণ রেসিও অনুয়ায়ী অর্থ পেয়ে থাকে। এই গরুর অবৈধ অর্থের কারণে সীমান্তবর্তী সংলগ্ন হাটের ইজারাদার চেয়ারম্যান-মেম্বারগণ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অনেকে গরু ব্যবসার পাশাপশি হুন্ডির ব্যবসাও করছে। রহস্যজনক কারণে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যগণও কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এভাবে চোরাইপথে গরু আসলে দেশী খামারিদের পথে বসতে হবে।
কয়েকটি সীমান্ত ঘুরে দেখা যায়, দিনের বেলায় কৃষি কাজের নাম করে ভারতীয়রা যেমন বাংলাদেশে অবাদে প্রবেশ করছেন তেমনি বাংলাদেশীরাও ভারতের অভ্যন্তরে অবাধে প্রবেশ করছেন। এসব লোকজনের অনেকের রয়েছে দু’দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র। মাদক ব্যবসায়ীরা দুই দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে অরক্ষিত সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতে গিয়ে অবস্থান করছে। আর এভাবেই চলছে সীমান্ত পথে দু দেশের মানুষের অবাধ যাতায়াত।
তাই স্হানীয় খামারিরা সরকারের বিভিন্ন উচ্চমহলের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে অবৈধ পথে আসা ভারতীয় গরু পাচার রোধে কঠোর পদক্ষেপ ও কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে চেম্বার-অব-কর্মাসের সভাপতি মোরল হুমায়ুন কবির বলেন, দেশীয় গরু'র খামারিদের রক্ষা'র স্বার্থে অবৈধ পথে আসা ভারতীয় গরু ও মাদকদ্রব্য পারাপারের বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, পুরো সীমান্তে ভারতীয় গরুসহ মাদক দ্রব্য পারাপার না করার জন্য বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) কয়েকটি সেক্টর কাজ করে, তারপরও আমাদের জেলা মাদকে সয়লাব। তাই অতি দ্রুত অবৈধ পথে আসা গরু ও মাদকদ্রব্য পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।