নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের কোচিং বাণিজ্যে
জিম্মি হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থী অভিবাবকেরা শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ
প্রকাশের পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন প্রভাবশালী দূনীতিবাজ শিক্ষক মঞ্জুর
হোসেন। নিজের অপরাধ থেকে মুক্তি পেতে তার নিকট পড়তে যাওয়া
শিক্ষার্থীদেরকে ব্যবহার করছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন
পূর্বক তাদের ঠেলে দিচ্ছেন অপরাধ জগতে। স্যারের নিষেধ মানতে গিয়ে
বিপদমূখী হচ্ছে এই সব কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
আজ (২০ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে তার কোচিংএর শিক্ষার্থীদের ভয় ভীতি প্রদর্শন
করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করিয়েছেন এই শিক্ষক। এমনকি
ছাত্রদের মারধর করে ও মিছিলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। তার কাছে পড়ুয়া ৭ম
শ্রেণির এক ছাত্র বলেন, আমাকে মারধর করে ভয় দেখিয়ে মিছিলে পাঠিয়েছে
স্যার। আমাকে মিথ্যা কথা বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন। খোজ নিয়ে জানা
যায় ছেলেটি নড়াইল ডিবি কার্য়ালয়ের ওসির ছেলে।
শিক্ষক মঞ্জুর হোসেনের নির্দেশে নড়াইল সরকারী বালক বিদ্যালয়ের কয়েকশত
ছাত্র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা
প্রশাসকের কার্য্যালয়ের সামনে যেয়ে মানববন্ধনে দাড়ায়।
এ সময় অতিরিক্ত
জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাশ^তী শীল কার্য্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে
শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান তোমাদের এখানে কে পাঠিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা
জবাব দেয় মঞ্জুর স্যার। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাশ^তী শীল
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠান।
কোচিং করানোর বৈধতা সম্পর্কে নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজের অধ্যক্ষ
মনিরুজ্জামান বলেন, কোন শিক্ষক প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারবে না। নতুন
শিক্ষাক্রম এই বিধি নিষেধ রয়েছে ।
শিক্ষার্থীদের স্কুল মূখি করার জন্য
অভিবাবক সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের এই কোচিং বানিজ্য বন্ধের জন্য এগিয়ে
আসতে হবে।
নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণির ছাত্র লাবিব ফারহান বলেন,আগের
দিন মঞ্জুর সারের কাছে পড়ে বাড়ি যাবার সময় কয়েকজন সাংবাদিক আংকেল আমার
কাছে জিজ্ঞেস করে মঞ্জুর সারের কাছে কয়জন পড়ি ,কত টাকা করে পড়ি,এরপর
বন্ধুরা আমাকে মাঠের মধ্যে নিয়ে মারছে।
আজকে (২০ ফেব্রুয়ারী)মঞ্জুর স্যার
আমাদেরকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে শিখিয়ে দিয়েছি।অর্দি,কায়েসসহ
কয়েক বন্ধু আমাকে জোর করে মিছিলে নিয়ে গেছে,মিছিলে না গেলে আমাকে মেরে
ফেলার হুমকি দিয়েছে।
আমি ভয় পাচ্ছি,কয়েকদিন আগে কোচিং ক্লাসে সাংবাদিক
আসলে মঞ্জুর স্যার বড় ভাইদের ডেকে এনে মটরসাইকেল ভাংচুর করে।এসব বড়
ভাইয়েরা মঞ্জুর স্যারের অধীনে কাজ করে।
লাবিব আরো বলে, সে আগে মঞ্জুর স্যারের কাছে পড়ত না তাকে ফেল করার ভয়
দেখিয়ে অতিরিক্ত ক্লাসে আসতে বাধ্য করেছে। মঞ্জুর স্যার জোর করে বলে
পড়লেও টাকা দিতে হবে না পড়লেও টাকা দিতে হবে আর না পড়লে তোমরা বিপদে
পড়বা।
নড়াইল ২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার পিতা গোলাম মোর্ত্তজা
স্বপন মুঠোফোনে মঞ্জুর হোসেনের কাছে ছাত্রদের রাস্তায় নামিয়ে মিছিল
করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জুর হোসেন বলেন সাংবাদিকরা ছাত্রদের ঘাড়
ধাক্কা দিছে তাই তারা আন্দোলন করছে।
এ বিষয়ে নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে
তিনি বলেন,আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না, আমি দেখছি কি যায়?
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাবুবুর রহমানের সাথে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগ
করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমে ৬ষ্ঠ, ৭ম শ্রেণিতে থাকছে না কোন গতানুগতিক
পরীক্ষা পদ্ধতি। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষক অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনে ধারাবাহিক
মূল্যায়নের মাধ্যমে পারদর্শীতা যাচাই করে মূল্যায়ন অ্যাপসে পাঠাবেন।
শ্রেণি কক্ষেই পড়াশোনা শেষ করার কথা রয়েছে,ফলে শিক্ষার্থীদের কোন
প্রাইভেট ও কোচিং ক্লাস করা লাগবেনা। অথচ সরকারের এই মহৎ উদ্যোগকে পূঁজি
করে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক মঞ্জুর হোসেন গণিতের শিক্ষক না হয়েও প্রধান
শিক্ষককে জিম্মি করে রুটিনে গণিতের ক্লাস নিয়ে শুরু করেছেন নিষিদ্ধ কোচিং
বাণিজ্য।
এ বিষয়ে অভিবাবকেরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করলে অভিযোগের বিষয়ে খোজ
নিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১টার দিকে স্কুল মাঠের উত্তরপার্শ্বে টিনের
ঘরে গিয়ে দেখা যায় নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মাসের শিক্ষক মোঃ
মঞ্জুর হোসেন নিজ স্কুলের ছাত্রদের কোচিং করাচ্ছেন প্রতি মাসে ১২০০ টাকার
বিনিময়ে।
সাংবাদিকদের দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠেন মঞ্জুর হোসেন।
সাংবাদিকদের দেখে
নেওয়ার হুমকি দিয়ে বলেন, আমরা হুক্কো খ্য়া না, আমাদের ছেলে পেলে আছে
টার্মিনাল পার হতে দেব না, দেখা হবে টার্মিনালে।
তিনি আরো বলেন জেলা
প্রশাসক তাকে কোচিং করানোর অনুমতি দিয়েছে সাংবাদিকরা যা পারে তা করুক।
সাংবাদিকদের গালিগালাজ করে সাংবাদিকদের উপর ছাত্রদের আক্রমণ করার জন্য উসকে দেন।
এ ছাড়া তিনি ছাত্রদের পড়তে আইছি পড়ব শ্লোগান শিখিয়ে দিয়ে মিছিল করতে
বলেন। এর আগেও নিজের অপকর্ম চালাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে তিনি ব্যবহার
করতেও দিধা করেনি।
তাইতো নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কিশোর গ্যাং তৈরির
কারিগর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন শিক্ষক মঞ্জুর হোসেন।
উল্লেখ্য, তিনি ছাত্র জীবনে ক্ষমসীন দলের পদ পদবিতে ছিলেন এবং বর্তমানে
শিক্ষক নেতা পরিচয় দিয়ে সর্বত্র প্রভাব খাটানোর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার
বিরুদ্ধে। নিজেকে বড় নেতা দাবি করে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও দিয়েছেন
শিক্ষক মন্জুর।