নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোচিং বানিজ্য ও
অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিলেন জেলা
প্রশাসক।
সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী
কোনো অতিরিক্ত ক্লাস ও কোচিং করানো যাবে না।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর
রহমানের সভাপতিত্বে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন
জেলা শিক্ষা অফিসার এস.এম ছায়েদুর রহমান,নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মালেক, ওই স্কুলের অভিযুক্ত
শিক্ষক মোঃ মঞ্জুর হোসেন প্রমুখ।
উল্লেখ্য (২০ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে তার কোচিংএর শিক্ষার্থীদের ভয় ভীতি
প্রদর্শন করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করিয়েছিছেন নড়াইল
সরকারী বালক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মঞ্জুর হোসেন। এমনকি ছাত্রদের মারধর করে ও
মিছিলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। তার কাছে পড়ুয়া ৭ম শ্রেণির এক ছাত্র বলেন,
আমাকে মারধর করে ভয় দেখিয়ে মিছিলে পাঠিয়েছে স্যার। আমাকে মিথ্যা কথা বলার
জন্য চাপ প্রয়োগ করেছেন। খোজ নিয়ে জানা যায় ছেলেটি নড়াইল ডিবি
কার্য়ালয়ের ওসির ছেলে।
শিক্ষক মঞ্জুর হোসেনের নির্দেশে নড়াইল সরকারী বালক বিদ্যালয়ের কয়েকশত
ছাত্র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা
প্রশাসকের কার্য্যালয়ের সামনে যেয়ে মানববন্ধনে দাড়ায়।
এ সময় অতিরিক্ত
জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাশ্বতী শীল কার্য্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে
শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চান তোমাদের এখানে কে পাঠিয়েছে। শিক্ষার্থীরা
জবাব দেয় মঞ্জুর স্যার। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাশ^তী শীল
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে থাকছে
না কোন গতানুগতিক পরীক্ষা পদ্ধতি। আনন্দময় শিখন নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিনের
মুখস্ত ও পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন ব্যবস্থার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের
পারদর্শিতায় গুরুত্ব ও নম্বরের পাশাপাশি মন্তব্য চালু হবার কথা রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে শিক্ষার বিষয়টি নতুন শিক্ষাক্রমে জোর দেওয়া
হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনে ধারাবাহিক মূল্যায়নের
মাধ্যমে পারদর্শীতা যাচাই করে মূল্যায়ন অ্যাপসে পাঠাবেন। শ্রেণি কক্ষেই
পড়াশোনা শেষ করার কথা রয়েছে,ফলে শিক্ষার্থীদের কোন প্রাইভেট ও কোচিং
ক্লাস এর প্রয়োজন পড়বে না।
অভিযোগে জানা গেছে, বানিজ্য বিভাগের প্রভাবশালী শিক্ষক মঞ্জুর হোসেন নিজ
স্কুলের ছাত্রদের ফেল করার ভয় দেখিয়ে স্কুল চলাকালীন সময়ে ৬ষ্ঠ ও ৭ম
শ্রেণির গনিত বিষয়ে স্কুলের খেলার মাঠ সংলগ্ন রাস্তার উত্তর পাশের একটি
টিনসেড ভবনে কোচিং করান। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১টার দিকে এ বিষয়ে খোঁজ
নিতে সাংবাদিক ওই স্থানে যান। তিনি সাংবাদিক দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের দেখে
নেওয়ার হুমকি দেন এবং ওই সময়ই তার কয়েক প্রতিবেশীকে ডেকে এনে এক
সাংবাদিকের মটরসাইকেল ভাংচুর করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে পড়ুয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৭ম শ্রেণির এক ছাত্র
জানান, ১৯ ফেব্রুয়ারী মঞ্জুর স্যারের কাছ থেকে পড়ে বাড়ি যাবার সময়
কয়েকজন সাংবাদিক আংকেল আমার কাছে জিজ্ঞেস করেন মঞ্জুর স্যারের কাছে কয়জন
পড়ি এবং কত টাকা নেন। আমি সরল বিশ্বাসে কথাটি বলায় কয়েক সহপাঠি আমাকে
কোচিং-এর পাশের স্কুল মাঠের মধ্যে মারধর করে। পরদিন দুপুরে ভয়ভীতি
দেখিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে মিছিল করে জেলা প্রশাসকের
কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন করতে বলেন স্যার।
এ সময় আমাদেরই কয়েক
সহপাঠি জোর করে মিছিলে নিয়ে যায়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)
অফিস থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের আমাদের ক্লাসে পাঠিয়ে দেন।
এদিকে কোচিং-এর বৈধতা সম্পর্কে নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজের অধ্যক্ষ
মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বিধিতে বলা হয়েছে কোন শিক্ষক
প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারবে না।
অভিযুক্ত শিক্ষক মোঃ মঞ্জুর হোসেন ফোনে বলেন, জেলা প্রশাসক বলেছেন
নীতিমালার মধ্যেই ক্লাস নিতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বলেন এ
বিষয়ে সরাসরি কথা বলবো।
নড়াইল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
বলেন, আমার অনুমতি ছাড়াই বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মিছিল করানো হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক স্যার আমাদের সকল শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করে নীতিমালা
মানতে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারি
নীয়মনীতির বাইরে কোনো ধরণের অতিরিক্ত ক্লাস বা কোসিং করানো যাবে না। যদি
এ নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটে তাহলে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস আইনানুগ ব্যবস্থা
নিবে। এছাড়া অভিযোগের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে ডেকে নিয়ে সতর্ক করে
দেওয়া হয়েছে।