নিউজ ডেস্ক :
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষকরা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকরা অবস্থান নিতে শুরু করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে ওই টাকায় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোট নামের একটি মোর্চার ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
শিক্ষক নেতারা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন কিছু বাড়িয়ে সঞ্চয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষগারে জমা নিয়ে সে টাকা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি সরকারি করা বা রাজস্ব খাতে স্থানান্তর সম্ভব। তাদের দাবি, সরকারিকরণ হলে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে, আর কৃতিত্ব পাবে সরকার। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে এমপিওভুক্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে সরকারি ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালবে বলে দাবি করছেন শিক্ষক নেতারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষক নেতারা বলছেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাঠ্যক্রম, আইন এবং একই মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হলেও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা সুযোগ-সুবিধা প ক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য বিরাজমান। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও পেনশনের ব্যবস্থা নেই। প্রতি মাসে বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখলেও বৃদ্ধ বয়সে যথাসময়ে এ টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। অনেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। অধিকাংশ শিক্ষক নিজ জেলার বাইরে চাকরি করেন তাদের জন্য বদলি চালু অতীব জরুরি। অধ্যক্ষ থেকে কর্মচারী পর্যন্ত নামমাত্র ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান।
আছে ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির অনৈতিক হস্তক্ষেপ। বিশ্বের কোনো দেশে শিক্ষা ব্যবস্থা এমন বৈষম্য আছে বলে মনে হয় না। এসক বৈষম্য দূর করতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা সরকারিকরণ জরুরি। এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন গ্রামের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি। মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসবে। ফলে স্বল্প খরচে সব নাগরিক একই মানের মানসম্মত শিক্ষা পাবে, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া হ্রাস পাবে, প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসবে ফলে অপচয় ও দুর্নীতি রোধ হবে। বিনিময়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা চাকরির নিশ্চয়তা পাবেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় থেকে সরকারিকরণ সম্ভব কি না জানতে চাইলে মহাজোটের আহ্বায়ক মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে পরিমাণ টাকা ব্যাংকে জমা আছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের আয়সহ অন্যান্য সম্পদ সরকার গ্রহণ করলে সরকারিকরণ করা সম্ভব।
সংগঠনের সদস্য সচিব মো. জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনতে নতুন নীতিমালা করছে। এ নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে অব্যবস্থাপনা ও অপচয় দূর হবে ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় জমা নিয়ে এবং নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার চাইলেই সরকারিকরণ করা সম্ভব।
মহাজোটের যুগ্ম সদস্য সচিব মো. মেজবাহুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে এবং সরকারি বরাদ্দের টাকার পরিমাণ কিছুটা বাড়ানো হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারিকরণ সম্ভব। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের বেতন কিছুটা বাড়ানো লাগতে পারে। গ্রামের স্কুলে ৫০ টাকা ও শহরের স্কুলে ১০০ টাকা বেতন নেয়া হলেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি করা যাবে।