এস আর,সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
আলুর ভালো ফলন হলেও দাম কম আর ক্রেতা না থাকায় রাজশাহীর তানোরে আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষিরা। এ বছর লোকসান পুষিয়ে নিতে ধার-দেনা করে আলু চাষ করে চাষিরা। এবারও উৎপাদন খরচের দ্বিগুন লোকসানে পড়েছে চাষিরা, এতে মাথায় হাত আলু চাষি ও কৃষকদের।
কৃষকরা জানায়, এ বছর পোঁকার আক্রমনের কারণে আলু ক্ষেতে নানা রোগ দেখা দিলেও সময় মত পরিচর্চার জন্য আলুর ফলন ভালো হয়েছে। যদিও বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটে কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় রোগ সারাতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ গত বছরের চাইতে বেড়ে গেছে বহুগুণে।
কিন্তু সেই আশায় পড়েছে হতাশার মেঘ। প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। যদিও বাজারে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোয়া হলেও কৃষকের কঠোর পরিশ্রম ও অধিক খরচের এবং উৎপাদিত আলুর ন্যায্য বাজার নেই কেনো? এমন হাজারো প্রশ্ন চাষীদের।
কারা এই সিন্ডিকেট করে কৃষকদের পথে বসাতে মরিয়া? কে নিয়ন্ত্রণ করছে বাজার? এধরনের প্রশ্নের কোন উত্তর খুজে পাচ্ছেনা কৃষকরা। অথচ আগাম আলু ১৮-১৯ টাকা কেজি দরে জমি থেকই বিক্রি করেছেন কৃষকরা।
এদিকে, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ওজুহাতে সেচের খরচও বাড়তি। কীটনাশকের লাগামহীন দাম ও সারের সিন্ডিকেটের শেষ নেই। বিশেষ করে রোপনের সময় দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়েছে পটাশসহ সব ধরনের সার।
এতে করে যে কোন বছরের তুলনায় প্রতিবিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে কৃষকদের। অথচ আলু ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। মাঠে নেই বহিরাগত আলু কেনার ব্যবসায়ীরা। ফলে চরম হতাশায় ভুগছেন আলু চাষিরা। ফলে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে আলুর দাম কম থাকায় কপালে জমেছে চিন্তার ভাজ।
আলু চাষি লুৎফর জানান, প্রতিবার ৯০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। গত মৌসুমে আগাম আলু বিক্রির জন্য লোকসান কম হয়েছিল। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবারও ৭৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলু তোলা শুরু হয়েছে। সবকিছুর বাড়তি দাম। প্রতি বিঘায় ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং লোকসান হবে বিঘায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে।
চাঁন্দুড়িয়া ইউপির গাগরন্দ গ্রামের গোলাম রাব্বানী জানান, গত মৌসুমে ১২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে ৩ লাখ টাকা লোকসান হয়। এবারো একই পরিমান জমিতে লাভের আসায় আলু চাষ করি। বাজারে যে দাম তাতে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। তিনি পাঁচন্দর ইউপির বিনোদপুর মাঠে আলু চাষ করেছেন। আলু উত্তোলন চলছে। কীটনাশক সার ও সেচের অতিরিক্ত খরচ। বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম দ্বিগুণ হলেও আলুর বাজারে চরম ধস।
উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির চিমনা গ্রামের কৃষক শাফিউল জানান, গতবার ৬ বিঘা জমিতে আলু করে ১ লাখ টাকা লোকসান হয়। লাভের আসায় ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করে খরচের টাকাও উঠছে না। একই গ্রামের ওমর জানান, গতবার ২০ বিঘা জমিতে প্রচুর লোকসান হয়েছিল। এবার কমিয়ে ১০ বিঘা জমিতে চাষ করে পুরোটায় লোকসান হবে মনে হচ্ছে।
একাধিক আলু চাষিরা জানান, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হিমাগার মালিক সমিতি। তারা ইচ্ছেমত দাম নির্ধারণ করে। তাদের সিন্ডিকেটের কারণে পথে বসতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। অথচ আলুর দাম নেই। তিনমাস কঠোর পরিশ্রম করার পর আলু উঠে। লাভের জন্য চাষ করা হয়। একমাস আগে আলুর বাজার ছিল ১৮ থেকে ১৯ টাকা কেজি। সেই বাজার কমে ১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১ টাকা কেজি দরে নেমেছে। আলু রোপনের সময় দ্বিগুন দামে সার কীটনাশক কিনতে হয়েছে। যেখানে ১ বিঘা জমিতে খরচ হত ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। আর এবার ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সার কীটনাশকের বাড়তি দামের কারণে পরিমান মতো সার দিতে না পারায় প্রতিবিঘায় ১২ থেকে ১৪ বস্তা আলুর ফলন কম হচ্ছে।
আলুর বাড়তি দাম হলে কৃষি দপ্তরের বিপণন বিভাগ হৈচৈ ফেলে দেয়। এখন দাম কম চাষিরা পথে বসছে আর তারা নিরবতা পালন করছে। এক কথায় কৃষক মরল কি বাচল সেটা কারো আসে যায় না। অথচ এই কৃষকরাই দেশে খাদ্য ঘাটতি ফেলতে দেয়নি। আর এদের নিয়েই মহাসিন্ডিকেট। কে শুনে কার কথা। আবার গভীর নলকূপ অপারেটরদের তো আছেই সেচ নিয়ে কারসাজি। বিদ্যুতের দাম বাড়তি বলে বিঘায় ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা সেচ হার নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে আলুর বাজার সিন্ডিকেটে প্রতিদিনই কমছে আলুর দাম। এতে হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার ৫০০’ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা দেশের তৃতীয়। নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য রোগবালায় কম ছিল। দাম তো নির্ধারণ করা কৃষি অফিসের কাজ নয়। এজন্য বিপণন বিভাগ রয়েছে। তবে, বাজারে যে দাম আছে হিমাগারে রাখলে পরে দাম পাবে বলে মনে করেন তিনি।