রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাট জেলা সদরের উপজেলা পশু হাসপাতালের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়ের অবহেলায় গৃহপালিত প্রাণী (গরু ও ছাগলের) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভোক্তভোগী শেখ মারুফ লেখালেখি করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলা পশু হাসপাতালে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হিসেবে স্বপন কুমার রায় যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। সোমবার, সকাল ১০ টায় লালমনিরহাট শহরের কলেজ শিক্ষার্থী শেখ মারুফের ছাগল অসুস্থ হওয়ায় উপজেলা পশু হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই সময় হাসপাতালের দায়িত্বরত স্বপন কুমার রায়কে বার বার ছাগলটিকে দেখার কথা বলেও স্বপন কুমার কোন রকম ভ্রুক্ষেপ করেননি। তিনি ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও সহকর্মীদের সাথে খোশ গল্পে মত্ত ছিলেন। অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর স্বপন কুমার একটি ঔষধের নাম লিখে দেয়। সেই ঔষধটি পুরো শহরে খুঁজে না পেয়ে হাসপাতালে ফিরে এসে ওই শিক্ষার্থী স্বপন কুমারকে জানালে তিনি বলেন, এটা মানুষের ঔষধ, দোকানিরা এটা সাধারন মানুষকে দিবে না। মুচকি মুচকি হেঁসে বলেন, নয়ারহাটের এক দোকানে পাওয়া যেত। বলতে না বলেত ছাগলটি ছটফট করতে করতে মারা যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগেও লালমনিরহাটের হাড়ীভাঙ্গা এলাকায় একজন খামারীর বিদেশী গরু মারার অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন স্বপন কুমার। তাছাড়াও হাসপাতালে টাকার বিনিময় পশু সেবা ও গ্রাম এলাকায় সরকারি বিভিন্ন ভ্যাকসিন প্রদানের নামে টাকা আদায় করা স্বপন কুমারের কাছে নতুন কিছু নয়। স্থানীয় প্রভাব আর দাপটে সরকারি পশু হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বপন কুমারের কাছে অসহায়। এসুযোগ কাজে লাগিয়ে করোনা কালীন ২/৩ বছরে স্বপন রায় দুহাতে টাকা কামিয়ে শহর সহ গ্রামে কিনেছেন আবাদি জমি, দিয়েছেন ভেটেনারীর দোকানও। তাই তো পশু হাসপাতালের সকল সুযোগ সুবিধা নিজের দোকান, বাড়ি, আত্নতীয়-স্বজন সহ যারা টাকা দিতে পারেন তাকেই দিচ্ছেন তিনি।
কারণ, উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায়ের গ্রামের বাড়ি পৌরসভাধীন নয়ারহাট এলাকায়। বাড়ির পাশে লালমনিরহাট সদর উপজেলা পশু হাসপাতালের ৫ বছরের অধিক সময় ধরে করছেন চাকরি। বেশকটি ভেটেনারী ঔষধ কোম্পানির সাথে রয়েছে তার গভীর সক্ষতা। এ+ সহ কয়েকটি কোম্পানির এজেন্ট নিয়ে বাড়ির পাশে নয়ারহাটে দিয়েছেন ভেটেনারীর দোকান। যার নাম রাখা হয়েছে, মা-বাবার আর্শিবাদ ডেইরী এন্ড পোল্ট্রি ফিড। সেই দোকানের সাইবোর্ডে স্বপন কুমারের নাম না থাকলেও মোবাইল নম্বর রয়েছে। তাই টাকার বিনিময় সরকারি পশু হাসপাতালের সকল সুযোগ সুবিধা নয়ারহাটের এই ভেটেনারীর দোকান থেকে পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেক খামারী নিশ্চিত করেছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা পশু হাসপাতারের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বপন কুমারকে দ্রুত বদলি করা হোক। তা না হলে ভেটেরিনারি (পশু) হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা মারাত্নকভাবে ব্যাহত হবে বলে ধারণা করছেন সচেতন খামারীরা।
অনিয়মের বিষয় অস্বীকার করে উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় বলেন, আমি ছাগলটিকে বাঁচানো চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু পারি নাই। আমি দুঃখিত।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা পশু হাসপাতালের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সাজিয়া আফরিন বলেন, আমি ছাগল মারা যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভোক্তভোগী শেখ মারুফকে নিয়ে অফিসে বসে মিমাংসা করে দিয়েছি। তাছাড়া চাকুরির পাশাপাশি স্বপনের দোকান ও কোম্পানির এজেন্টের বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।