মোঃ জুলহাস উদ্দিন হিরো, শেরপুর প্রতিনিধিঃ
শেরপুর সদর উপজেলার ৮নং লছমনপুর ইউনিয়নে যাতায়াতের জন্য বিকল্প সড়ক তৈরি না করেই চলছে একটি নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ইউনিয়নে বসবাসকারী কয়েক গ্রামের সাধারণ মানুষ, ব্যবসারী সহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে অসুস্থ ও গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা সহ হাসপাতালে আনা-নেওয়ায় বিপাকে পড়েছে স্বজনেরা।
নিচু এলাকা হওয়ায় হালকা বৃষ্টিতেই সেতু এলাকা কাঁদা সহ পানিতে টৈটুমভুর হয়ে যায়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এখন সেখানে প্রায় হাটু পানি। বিকল্প সড়ক তৈরি না করে মূল সড়ক কেটে ফেলায় সাইকেল, রিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা সহ যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ।
জনসাধারণের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প সড়ক তৈরি ও দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসীরা। ঘটনাটিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালীপনা ও প্রশাসনের নজরদারীর অভাব বলে জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের জমসেদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের পিছনের সড়কে নির্মাণ হচ্ছে সেতুটি। কিন্তু বিকল্প রাস্তা না থাকায় পায়ে হেটে ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে আবার কেউ কেউ পানিতে ভিজে ভিজে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। বিকল্প রাস্তা তৈরি না করলেও আগে খানাখন্দ পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতো। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে এখন হাটু পানি হয়েছে।
লছমনপুর ইউনিয়নের হাতি আগলা পূর্ব, পশ্চিম ও মোল্লাপাড়া গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষের একমাত্র কেন্দ্রবিন্দু কুসুমহাটি বাজারে আসতে তাদের বেছে নিতে হচ্ছে বিকল্প পথ। তাঁদের দৈনন্দিন যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে সড়কটি ব্যবহার করে যেখানে সময় লাগতো ১০ মিনিট এখন লাগছে ৩০ মিনিট।
জানা যায়, ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ মিটার লম্বা সেতুটির নির্মান কাজ পায় মেসার্স নাফিউ কন্সট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আড়াই মাস আগে রাস্তা ভেঙে পাইলিং এর কাজ শুরু করেন ঠিকাদারের লোকজন। এর পর থেকে শুরু হয় দুর্ভোগ।
৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী ছাদিয়া আক্তার বলে, আমাদের প্রতিদিনি স্কুল ও প্রাইভেটে যেতে হয়। এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের পোশাক ভিজে যায়। আগে কষ্ট হলেও পারাপার করতে পারতাম। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় পানি জমে গিয়ে এখন আমাদের যাতায়াতে অনেক সমস্যা হচ্ছে।
কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, তারা যখন মনে চায় তখন ব্রিজ তৈরি করুক। ব্রিজ তৈরির জন্য রাস্তা কেটে ফেলায় এখন তো হাটু পানি হয়ে গেছে। আমরা আমাদের উৎপাদিত কৃষি পন্য নিয়ে কিভাবে বাজারে যাবো ? পাশ দিয়ে যদি একটা রাস্তা তৈরি করে দিতো তাহলে তো সমস্যা হতো না। আমাদের হাট বাজারে যাওয়া অনেক অসুবিধা হয়ে গেছে।
ইউপি সদস্য আব্বাস আলী আক্ষেপ করে বলেন, “আমি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, আপনাদের নির্মানকাজ চলাকালিন সময়ে পাশ দিয়ে অস্থায়ী বিকল্প রাস্তা তৈরি করে দেন যাতে মানুষ চলাচল করতে পারে । কিন্তু তারা আমার কথা শুনেনি। এর আগেও এই ঠিকাদার আমাদের আরেকটি রাস্তার সেতুর কাজ পায়। সেখানেও তারা বিকল্প রাস্তা তৈরি করেনি। পরে বাধ্য হয়ে আমরা এলাকাবাসী নিজেরা বিকল্প রাস্তা তৈরি করেছি।”
লছমনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, আমি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে বিষয়টি অবহিত করেছি। এবং তাদের দ্রুত নির্মানকাজ শেষ করার অনুরোধ করেছি।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ খবিরুজ্জামান খান বলেন, সেতুর নির্মাণাধীন রয়েছে। যে কোন ব্রিজ তৈরির সময় ডায়ভারশন রোড তৈরি করতে হয়। আমরা দ্রুত রাস্তা করে দিবো।