রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাট জেলা সদরের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি আনন্দ বাজার গুদামের চওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামসুজ্জামান লিজুর বিরুদ্ধে বিদ্যালয় উন্নয়ন ফান্ডের টাকা আত্নসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি একই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যগন মিলে ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলা ৬-নং খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি আনন্দ বাজার সংলগ্ন গুদামের চওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামসুজ্জামান লিজুর বিরুদ্ধে বিদ্যালয় উন্নয়ন ফান্ডের টাকা আত্নসাতসহ নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার দুর্নীতির শেষ নাই। উক্ত বিদ্যালয়ে প্রতি মাসে একটি করে মাসিক মিটিং থাকার কথা থাকলেও ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গত দেড় বছরে একটি মাসিক মিটিংও করেনি। দীর্ঘ সময়ে মাসিক মিটিং না করার কারনে বিদ্যালয়ের সভাপতি মাসিক মিটিং এর আহবান করেন। সেই মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের জমিদাতা, অভিভাবক সদস্যবৃন্দ ও ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন। সেই মাসিক মিটিং এ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামসুজ্জামান লিজুর কাছে স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজের স্লিপের ১ লাখ ১০ হাজার টাকার হিসাব চাইলে তিনি তা দিতে পারেনি। পরে খোঁজ নিয়ে জানাযায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সই নকল করে সোনালী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কাজ না করে আত্মসাৎ করেন। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পরবর্তী সময় বিদ্যালয়টির সভাপতি সহ বাকি অভিভাবক সদস্যবৃন্দ উত্তোলনকৃত টাকা বিদ্যালয়ের কোন কাজে ব্যবহার বা খরচ করা হয়েছে জানতে চাইলে ওই প্রভাবশালী শিক্ষক টাল-বাহানা শুরু করেন। এবং নিজেকে বিদ্যালয়ের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি ও অভিভাবক বৃন্দের সাথে উত্তোলনকৃত টাকা নিয়ে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে অশালীন আচরণসহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলেন ওই শিক্ষক। পরবর্তী সময়ে সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ লিখিত আকারে অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসকসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান সদর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার লালঃ সহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবরে। শুধু এতেই ক্ষান্ত নন প্রধান শিক্ষক, তিনি বিদ্যালয়ের ১৪ শতক জমি লিজ দিয়ে সে অর্থও আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়াও সরকার ঘোষিত জাতীয় দিবস উদযাপনে অনীহা, বিদ্যালয়ের প্রজেক্টর বাহিরে ভাড়া দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়মিত মাসিক মিটিং না হওয়ার অভিযোগ, বিদ্যালয়ের রেজুলেশন খাতা ছিড়ে ফেলাসহ অনেক অভিযোগ উঠেছে।
ওই বিদ্যালয়ের সদস্য আব্দুল কাদের বলেন, আমি বিদ্যালয়ে ১৫-২০ বছর ধরে সদস্য আছি। বিগত বছর গুলোতে আমি কখনও এই বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষকের অশোভন আচরন পাইনি। কিন্তু এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামসুজ্জামান লিজু আমাকে ল্যাংড়া কাদের বলে সম্বোধন করেন। আমি জন্মগত শারীরিক ভাবে বাম পায়ে সমস্যার কারনে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরায় অসুবিধা হয়। আমাকে এ ভাবে একজন শিক্ষক ল্যাংড়া বলবে এটা কোন ভাবে মেনে নেওয়ার মত নয়।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা মানুষকে" মানুষ বানায়" আর এই প্রধান শিক্ষককে অমানুষ বানিয়েছে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে প্রধান শিক্ষক তাহলে ওই বিদ্যালয়ে কতটুকু লেখাপড়া হবে? বাচ্চাদের পড়াশোনা না করিয়ে চোরি বিদ্যা শিক্ষাচ্ছে ওই প্রধান শিক্ষক। আমরা তার দূর্নীতির বিচার দাবী করছি এভাবে কথাগুলো বললেন ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামসুজ্জামান লিজু এ বিষয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে স্কুলের সভাপতি চক্রান্ত করতেছে এবং আমার নামে টাকা আত্নসাতের মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করছে। সভাপতির সাথে আমার সম্পর্ক ভালো না থাকার কারণে এসব করছে। আমার উপরন্তু কর্মকর্তাদের সময় মত সব কিছু জানিয়ে রেখেছি। বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফান্ডের টাকা দিয়ে কি উন্নয়ন করছেন এমন প্রশ্নে কোন উত্তর দিতে পারেনি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবিদা সুলতানা এ বিষয়ে বলেন, আমি অভিযোগর বিষয়ে তেমন কিছু জানি না, অনেক দিনের বিষয় তাই বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার রায় চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, আমি এখানে নতুন আসায় অভিযোগ বিষয়ে কিছু জানি না। নতুন করে অভিযোগ দিলে ব্যবস্হা গ্রহন করা হবে এবং শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতি পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।