মাসুদ রানা,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;
স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় সংরক্ষণ করা হয়নি গণকবর ফলে অস্থায়ী বাঁশের বেড়ায় শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে শহীদ পরিবার, খানসামা ডিগ্রি কলেজ ও খানসামা উপজেলা শাখা ছাত্রলীগ।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে খানসামা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সদস্য বাবু অমিয় কুমার গুহকে ১৯৭১ সালের ১ জুন গভীর রাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাড.জহির উদ্দিনের বাড়ি থেকে আটক করে পাকিস্তানি দালালরা ২জুন খানসামা থানায় বন্দি করে রাখে। তার পরের দিন পাকবাহিনীকে খবর দিয়ে রাজাকাররা বাবু অমিয় কুমার গুহকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। এরপরে সাইকেলে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে পার্শ্ববর্তী নীলফামারী ও খানসামা উপজেলার সংযোগস্থল পুলহাট নামক স্থানে ইছামতী নদীর তীরে গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে রেখে যায়। একই স্থানে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া টেডি ডাক্তার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী খু্ট্টু মিয়াকে হত্যা করে পাকবাহিনী। পরে স্থানীয় তরনী কান্ত, নজরুল ইসলামসহ অনেকে তাদের লাশ নদী থেকে তুলে কবর দেন।
কিন্তু স্বাধীনতা ও শহীদদের মৃত্যুর ৫২ বছরেও এসব পরিবার শহীদ পরিবার হিসেবে সরকারী ভাবে স্বীকৃতি পায় নাই। শুধু অমিয় কুমার গুহয়ের নামে একটি রাস্তার নামকরণ ও উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিভিন্ন দিবসে খেলাধুলার নামকরণ ছাড়া আজ পর্যন্ত কোন সাহায্য-সহানভূতি পায়নি পরিবারগুলো।
আর স্বাধীনতার সূর্বণজয়ন্তীতেও গণকবরের তালিকা ও সংরক্ষণ, শহীদ পরিবারের তালিকা তৈরী ও রাজাকারের তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সুধীজনরা।
তবে গত ৯ বছরের ধারাবাহিকতায় ২৫ মার্চ খানসামা ডিগ্রি কলেজের আয়োজনে ইছামতী নদীর তীরে অসংরক্ষিত বধ্যভূমিতে গণহত্যা দিবসে শহীদের স্মরণ করা হয়। এর আলোকে শনিবার দুপুরে অস্থায়ী বাঁশের বেড়ায় স্মৃতিস্তম্ভে খানসামা ডিগ্রি কলেজ ও উপজেলা ছাত্রলীগ শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করে। এরপরে খানসামা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্মরণ সভা বক্তব্য রাখেন খানসামা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম, শহীদ অমিয় কুমার গুহের দৌহিত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহ, এই গণকবরের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় নজরুল ইসলাম এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এরশাদ জামানসহ অনেকে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন খানসামা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, উপজেলা ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীবৃন্দ ও স্থানীয় বাসিন্দা।
এই গণকবরের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, অমানবিক ভাবে নির্যাতন করে অমিয় বাবুসহ কয়েকজনকে এখানে হত্যা করা হয়েছে। সেই স্মৃতি আজও আমাদের চোখে ভাসে কিন্তু এই স্মৃতিময় স্থানে সংরক্ষণে কোন উদ্যোগ নেই। যা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। তা না হলে কবরগুলো নদীতে বিলিন হয়ে যাবে।
শহীদ অমিয় কুমার গুহের দৌহিত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহ বলেন, স্বাধীনতা ও আওয়ামী লীগের স্বার্থে আমার দাদু মৃত্যুর আগপর্যন্ত আপোষ করেন নাই। যার ফলে তাঁর এই করুন মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করলেও আমরা এখন সরকারী তালিকভুক্ত হয়নি এবং গণকবর সংরক্ষন করা হয় নাই। তাই গণকবর সংরক্ষন ও শহীদ পরিবার হিসেবে তালিকা অন্তর্ভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর অনুরোধ রইলো।
খানসামা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শহীদের কারনেই আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি৷ তাই তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে গণকবর সংরক্ষনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
Leave a Reply