মোঃ জুলহাস উদ্দিন হিরো, শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুরে এক দিনমজুরের স্ত্রীকে ভিজিডি কার্ড দেওয়ার নাম করে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে কার্ড না দিয়ে উল্টা শ্লীলতাহানী করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক মেম্বারের ছেলের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মো. মোস্তফা মস্তু (৪০) সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কান্দাশেরীরচর এলাকার ইউপি সদস্য মো. নুরুজ্জামান মেম্বারের ছেলে। এলাকার মানুষের কাছে বিচার না পেয়ে ভুক্তভোগী নারী ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সং/২০০৩) এর ১০ ধারায় বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলার নম্বর ১২২/২০২৩। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগী ওই নারী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে টাকা ছাড়া কার্ড দেয়া হবে বলে জানালেও মেম্বারদের কারনে আমরা টাকা ছাড়া কার্ড পাইনা। এই মেম্বার ও তার ছেলে টাকা ছাড়া কোন কার্ড দেয়না। আমি টাকা দিয়ে এক মাস যাবত পিছে পিছে ঘুরতেছি। তার ছেলে আমাকে কার্ড দিবে বলে ডেকে নিয়ে আমার সাথে খারাপ আচরন করেছে। আমি এর বিচার চাই।”
এছাড়াও ওই এলাকার গৃহবধু সাজেদা বেগম অভিযোগ করে বলেন,“মেম্বার আমার আমার কাছেও কার্ড দেয়ার জন্য ৭ হাজার টাকা চায়। পরে সে তার স্ত্রীকে আমার বাড়িতে পাঠালে ৫ হাজার টাকা, ছবি ও আইডি কার্ড দেই। এছাড়া আবেদন করার জন্য ১শ টাকা দেই। কিন্তু কার্ড না দিয়ে ১৫ দিন পরে আমার টাকা ফেরত দেয়।”
একই গ্রামের সাফিয়া বেগম নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “মেম্বার আসলেই মানুষের কাছে টাকা নেয়। সে আমার কাছ থেকে ১৫ টাকা দরের চালের কার্ড দেয়ার কথা বলে ১হাজার টাকা নিয়েছিলো কিন্তু কার্ড দেয়নি। দুই মাস পরে আমার টাকা ফেরত দিয়েছে। সে যার কাছে বেশি টাকা পায় কার্ড তাকে দেয়, আর কম টাকা ওয়ালাদের টাকা ফেরত দেয়।”
এ বিষয়ে লছমনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বলেন, “আমি ঘটনাটি লোক মুখে শুনেছি। তবে উভয় পক্ষের কেউ আমাকে কিছু বলেনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।” এছাড়াও শেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি বিষয়টি জানিনা। তবে ভিজিডি কার্ডের বিপরীতে টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, “টাকা নেয়ার ব্যাপারে ভুক্তভোগী যদি আমাদের লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। যদি নির্যাতন করে থাকে তাহলে সেটা একটা ফৌজদারী অপরাধ। যেহেতু একটা রেগুলার মামলা হয়েছে, মামলা মামলার গতিতে চলবে। এমন কাজ করে থাকলে তার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।”
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেম্বার মো. নুরুজ্জামান বলেন, “আমি কোন টাকা নেইনি। আমি টাকার জন্য মেম্বার হইনি, সম্মানের জন্য মেম্বার হয়েছি। আমি এলাকার সম্মানি ব্যক্তি। আমাকে সমাজে অসম্মান করার জন্য এই অপবাদ দেয়া হয়েছে।” এছাড়াও তার ছেলে মোস্তফা বলেন, “এগুলো সব ষড়যন্ত্র, সাজানো নাটক। আমি তাকে কোন ধরনের নির্যাতন করিনি।”