এস আর,সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
রাজশাহীতে শুরু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহ। সোমবার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা কয়েক দিন ধরেই রাজশাহীর ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহে ঝরে পড়ছে গাছের ছোট ছোট আম আর লিচু। পুড়ছে মাঠের ধান।
আম আর লিচুর ঝরে পড়া ঠেকাতে সকাল-বিকেল দুইবেলা গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। মাঠের বোরো ধানের জমিও ভিজিয়ে রাখতে বলা হচ্ছে সেচ দিয়ে। কিন্তু মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। এর ফলে সেচের পানি পেতে দেরি হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের হিসাবে রাজশাহীতে এ বছর ৬৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, ১৯ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতে আমবাগান এবং প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আছে লিচু বাগান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কড়ালিকাল পার করে আম ও লিচু এখন পরিণত হতে শুরু করেছে। আর মাঠে মাঠে গাছে শিষ আসতে শুরু করেছে ধানের। কোনো কোনো খেতে ধান পাকতেও শুরু করেছে। গাছের ওপরের পাতা বাদামি বর্ণ ধারণ করে পুড়ে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় তীব্র খরায় ধানগাছের ওপরের পাতা পুড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা বলছেন, অন্য এলাকার তুলনায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষ করতে পানির প্রয়োজন হয় বেশি। কিন্তু এখন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপ থেকে চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তীব্র খরায় ধান খেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
সোমবার দুপুর ১২টায় গোদাগাড়ীর চকপাড়া মোড়ের এক চায়ের দোকানে বসে গল্প করছিলেন কয়েকজন কৃষক। দোকানি রুমানুল ইসলাম বললেন, ‘এমনিতে লম্বা সিরিয়াল ধরে পানি নিতে হয়। এখন কয়েক দিন ধরে আবার বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ কারণে সময়মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানি পেতে দেরি হওয়ায় জমি ফেটে চৌচির হচ্ছে।
চকপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আল-আমিন বলেন, ‘এতই খরা পড়ছে যে আজ পানি দিলে কালকেই জমির পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। দুই দিন পরই পানি দেওয়া উচিত। কিন্তু ১০ দিনের আগে কোনো সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। লোডশেডিংয়ের কারণে পানির সিরিয়াল পেতে দেরি হচ্ছে।’
দারিয়াপুর বিলের ধানচাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘নিচু জমিগুলোর ধান ভালো আছে। কিন্তু উঁচু জমির ধানে খুব সমস্যা। সময়মতো পানি দিতে না পারলে ধান হবে না, সব চিটা হয়ে যাবে।’
তীব্র খরায় সমস্যার কথা জানালেন আমচাষীরাও। পবার পারিলা এলাকার আমচাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খরার কারণে প্রত্যেক থোকা থেকে আম ঝরে পড়ছে। থোকায় ৫টা আম থাকলে একটা অন্তত শুকিয়ে যাচ্ছে। এ রকম খরা চলতে থাকলে আমের ফলন কমে যাবে।’
মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার লিচুচাষী সাব্বির হোসেনও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘গাছের গোড়ায় সকাল-বিকেল পানি ঢালছি। তাও লিচুর গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। গাছের চেয়ে মনে হচ্ছে মাটিতেই বেশি লিচু পড়ে আছে। এখন লিচুর জন্য বৃষ্টির খুব দরকার।’
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খরা পড়ছে, কিন্তু এখনই যে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে গেছে তা নয়। আম-লিচু তো এমন প্রতিকূল আবহাওয়ারই ফল। খরা হবে, ঝড়-বৃষ্টি, শিলা হবে, এর মধ্যে দিয়ে এগুলো বড় হবে। তবে এখন বৃষ্টি প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে পরিবেশটা ঠান্ডা হবে। তখন আর ঝরবে না।’
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ‘এই খরায় কেমন ক্ষতি হচ্ছে সেটা আরও ভালোভাবে দেখে বলা যাবে। এখন আম আর লিচু রক্ষা করতে সকাল-বিকেল গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। বিকেলের পানিটা গোড়ার পাশাপাশি গাছের ওপরেও স্প্রে করে দিতে হবে। তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।’
বোরো ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধানের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। বোরো ধান তো বেশি খরাতেই ভালো হয়। তবে এ জন্য নিয়মিত সেচেরও প্রয়োজন হয়। কৃষকেরা যেন এটা নিশ্চিত করেন।’