মাসুদ রানা,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;
দিনাজপুরের খানসামায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ক্ষমতার দাপট দিয়ে অবৈধভাবে বেলান নদী ও ইছামতী নদী থেকে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার বালু ও মাটি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এতে ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি হুমকিতে পড়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার বেলান নদী ও ইছামতি নদী থেকে প্রায় ৩০ টি পয়েন্ট হতে প্রতিদিন ১০০-১২০ ট্রাক বালু ও মাটি পরিবহণ করছে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। আর যত্রতত্র বালু ও মাটি উত্তোলনের ফলে এই উপজেলায় চলমান সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। সেই সাথে নদী-তীরবর্তী গ্রামের মানুষের বসতভিটা ও আবাদি জমি ভাঙনের সম্মুখিন হয়ে পড়বে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বেলান নদীর পাইকাকুরা ও ইছামতি নদীর মধু ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবস্থা অনেকটা মগের মুল্লুকের মতো। নিজের ইচ্ছা মতো বালু ও মাটি উত্তোলন করছে। কিন্তু কারও যেন কিছু বলার নেই। এই বালু উত্তোলনের মাধ্যমে একদল মানুষ অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা পকেটে পুরছে। আর অন্যদিকে সরকারের কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ছে। যত্রতত্রভাবে এভাবে বালু উত্তোলন করলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয় এবং নদীর পাড় ভেঙে যায়। নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিরও ক্ষতি হচ্ছে।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক নদ তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, প্রভাবশালী মাটি ও বালু ব্যবসায়ীরা অনুরোধ সত্ত্বেও বালু ও মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। সারা দিনরাত ট্রাকে মাটি ও বালু পরিবহন করায় গ্রামীণ সড়কগুলো ধসে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আবার বালু তোলার কারণে নদের তীরবর্তী ফসলি জমি ও বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে।
তারা আরও বলেন, প্রভাবশালী বালু ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করে প্রতিকার মেলেনি। মাঝে মাঝে প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা হলেও কিছুদিন পর আবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এ অবস্থা বিরাজ করলে আগামী দু’তিন বছরের নদীর পাশের ফসলি জমি, ভিটে ও বাড়িঘর ধসে নদগর্ভে বিলীন হবে।
এ প্রসঙ্গে বালু ও মাটি উত্তোলনকারী আলাউদ্দিন জানান, বেলান নদীর তীরবর্তী ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা কিনে সেখান থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। তিনি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত নন।
অপর বালু ব্যবসায়ী মধু সংবাদ কর্মীদের জানান, আমার সব ডকুমেন্ট আছে। আপনাদের সাথে কথা হলে থানায় গিয়ে হবে। খানসামা থানার ওসি কে চিনেন? ওসি আমার খালাতো ভাই।
এ ব্যাপারে ওসি জানান, আমার কোন ভাই নেই। আমি এখানে চাকুরী করি। আমি জনগণের সেবক। কেউ যদি আমার নাম ভাঙিয়ে অবৈধ কিছু করে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আরেক বালু ও মাটি উত্তোলনকারী সুবল বলেন, ‘তিনি ব্যক্তি মালিকানা জায়গা কিনে বালু ও মাটি উত্তোলন করছেন। নদীর তীর থেকে এভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন করার বিষয়ে তাকে কারা অনুমতি দিয়েছেন মর্মে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি পুলিশ, চকিদার, তহশিলদার, মেম্বার ও চেয়ারম্যান কে ভালোবাসা দিয়ে ম্যানেজ করেই এই বালু উত্তোলন করেছি।’
বালু ও মাটি উত্তোলন করে ট্রাক্টর দিয়ে বেপরোয়া যাতায়াতের কারণে রাস্তার বেহাল দশা’র ব্যাপারে আরেক বালু ব্যবসায়ী রাশেদ শাহ্ বলেন, আমি কি ব্যবসা করবো না? আমিও সরকারী কাজ করতেছি রাস্তার। আপনি বলেন গিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আছে, উপজেলা চেয়ারম্যান আছে, আপনার টিও সাব আছে আপনি বলেন গিয়া। অনুমতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মোস্তফা শাহ্ (ইউপি চেয়ারম্যান) এর ভাতিজা এ উপজেলা চেয়ারম্যান লায়ন চোধুরীর ভাই রাশেদ শাহ্ ওনাকে গিয়ে বলেন যে, আপনার ভাই রাশেদ শাহ্ এইটা করেছে।
এ ব্যাপারে আঙ্গারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা আহম্মেদ শাহ্ মুঠোফোনে বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের কোন নিয়ম নাই। নদী থেকে নিজের জমার জমি থেকে বালু উত্তোলন করে তাহলে আমার কিছু নাই। বেলছা দিয়ে বালু ও মাটি তোলা যাবে। মেশিন দিয়ে যাবে না। এছাড়াও ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের রাস্তা ভাঙ্গার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাস্তা তো ভাঙবেই! কারণ একটা কথা বলি শোনেন, মানুষের কাজ করতে গেলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাস্তায় বালু দিতে হচ্ছে। দেশের উন্নয়ন করতে গেলে কিছুতো হবেই! একবারেই তো ইয়া….করা যাবে না। এগুলোতো ট্রলি দিয়ে মাটি দেয়। বেপরোয়াতো ১০ চাকার গাড়িতে। এগুলো ছোট ট্রলি দিয়ে কতগুলো মাটি উঠে। নদী থেকে মালিকানা জমি থেকে মাটি তুললে প্রশাসনের কোন অনুমতি লাগেনা বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশিদা আক্তার বলেন, বালু উত্তোলন ঈদের আগে বন্ধ করা হয়েছে। আবার শুরু করেছে, ঈদের আগে মোবাইল কোর্ট করা হয়নি। এখন করবো। এদের আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। অবৈধভাবে কোন কাজ করা যাবে না। বালু ব্যবসায়ীরা চেয়ারম্যানের পরিচয় দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছে চেয়ারম্যান কিছুই না! ঠিক আছে। চেয়ারম্যান কি করবে? চেয়ারম্যানের বালু না, এগুলো হলো সরকারের ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের। ঠিক আছে। আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে এগুলা রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য।
Leave a Reply