এস আর,সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে বিলকুমারী বিলের বোরো ধান কাটা মাড়ায় শুরু হয়েছে। তবে বহিরাগত শ্রমিক না আসায় শ্রিমক সংকট দেখা দিয়েছে।
এবারে পাকা ঝরঝরে ধান তুলতে পারছেন কৃষকরা। বিগত ৮-১০ বছরেও এমন ফলন হয়নি বলে জানান কৃষকরা। প্রতি বিঘায় নিম্মে ৩০ থেকে ৩৫ মন ফলন হচ্ছে এবং বাজার দামও ভালো থাকায় খুশি কৃষক কৃষানিরা।
তবে দাম ও আবহাওয়া নিয়ে অনেকটাই সংকিত। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিলের জমির ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষি দপ্তর। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারনে দ্রুত ধান কাটা নিয়ে রয়েছে সন্দিহান।
বিলের একাবারে নিচে থেকে মাথায় ও বাঁশের ভারে করে দিন নিয়ে এসে তালন্দ বাজার পার হয়ে মুল রাস্তায় পালা দিয়ে রেখেছেন শ্রমিকরা। রাখার পর শ্রমিকরা বসে আরাম করছিলেন।
সেখানেই কথা হয় শ্রমিক সুজন, জগদিস সইবুর ও শাহাজাদের সাথে। তারা জানা ১০ জন শ্রমিক এক সাথে কাজ করছি। বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ মন মুজরীতে ধান কাটা হচ্ছে। যে সব জমি একেবারেই নিচে সেগুলো থেকে ধান বহনে প্রচুর কষ্ট হয়।
ওই সব জমিতে বিঘায় ৫ মন করে নেওয়া হয়। আর রাস্তার ধারের জমি সেগুলোতে ৪ মন করে নেওয়া হয়। তারা হরিদেবপুর গ্রামের সঞ্জয়, বিপুল ও উজ্জলসহ কয়েকজন কৃষকের ধান কেটে বহন করছেন।
শ্রমিক সুজন বলেন, বিলের প্রায় সব জমির ধান পেকে গেছে। নিচ থেকে ধান কেটে বহন করে রাস্তায় রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে ভ্যান ভটভটি ও ট্রলি এবং ট্র্যাক্টরে করে কৃষকের উঠানে যাচ্ছে।
জগদিস বলেন, আমরা একসাথে ১০ জন শ্রমিক ধান কাটা মাড়ায়ের কাজ করছি। প্রতি বিঘায় ৫ মন ধানের চুক্তিতে কাটা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত উজ্জলের দেড় বিঘা জমির এক বিঘার সামান্য বেশি জমিতে মাড়ায়ের পর ৩৮ মন ফলন হয়েছে।
তারা আরো বলেন, বিগত ৮-১০ বছরের মধ্যে এবারের ফলন প্রচুর হচ্ছে। প্রায় ১৫ দিন ধরে প্রখর তাপমাত্রা ছিল, এজন্য শুকনো ঝরঝরে ধান ও খড় পাচ্ছে কৃষকরা।
চৌবাড়িয়া টু মাদারিপুর রাস্তার পশ্চিমে একসঙ্গে ২২ জন শ্রমিক ধান কাটছেন। তারা সবাই চাপাইনবাবঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকসা ইউনিয়ন থেকে এসেছেন।
তারা জানান গত রোববার এসেছি ধান কাটতে। থাকছি মালশিরা গ্রামে। এখন পর্যন্ত ১৫-১৭ বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছি। বিঘায় নিম্মে ৩০ মন থেকে ৩৫ মন করে ফলন হচ্ছে।
চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শ্রমিক আকতার, সহিদুল, এমদাদুল বলেন, বিগত ১০-১২ বছরের মধ্যে ধানের এমন চেহারা দেখা যায় নি। যেমন ধানের ফলন হচ্ছে তেমনি ভাবে মিলছে খড়।
যার কারনে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। ধান কাটা মাড়ায় খাওয়া খরচ বাদে ১৮-২০ মন করে ধান নিয়ে যাওয়া যায় বাড়িতে, যা সারা বছরের খাবার। তবে বৈশাখী ঝড় বৃষ্টি হলে মড়কের শেষ থাকবে না।
পৌর সদরের কৃষক মতিউর, সাহেব, মফিজ বলেন, আর এক সপ্তাহ খরতাপ থাকলে বিলের জমির ধান উঠে যাবে। বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে এবারে ফলন হবে বাম্পার এবং দামও ভাল আছে।
কিন্তু শ্রমিক সংকট প্রচুর। অবশ্য বহিরাগত শ্রমিকরা আসা শুরু করেছেন। পৌর সদরে চলে কাচির হিসেব, বিঘায় ৩৫-৩৮ মন করে ফলন হচ্ছে। আর পাকি ৩০-৩২ মন করে বিঘায় ফলন হচ্ছে।
ধান ব্যবসায়ী সুনিল বলেন, পাকি ১১শ টাকা মন ধান বিক্রি হচ্ছে। তবে ধানের দাম আরো বাড়বে। তবে উপজেলায় কাচি পাকি দুই ধরনের হিসাব হয়। ২৮ কেজিতে কাচি ১ মন, বাজার মুল্য ৭০০ টাকা, আর ৩৭ কেজিতে পাকি ১ মন বাজার মুল্য ১১০০ টাকা।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, এবার বোরো চাষ হয়েছে ১২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। সোমবার পর্যন্ত ৩০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। কেজিতে বিঘা প্রতি ২৬-২৭ মন করে ফলন হচ্ছে।
সেই হিসেবে ১ লক্ষ মে:টন ফলন হবে। আমাদের টার্গেট ছিল ৭০ হাজার মে : টন। বৈশাখ মাস এজন্য কৃষকদের দ্রুত ধান কাটতে বলা হয়েছে।
বিগত দশ বছরে এমন ফলন হয়নি এবার হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আবহাওয়া অনুকুলে ছিল, সব সময় কৃষকের মাঝে থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আর মহান সৃষ্টি কর্তার রহমতও ছিল। এপ্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত আকাশে প্রচুর মেঘ ছিল। একারনে এক প্রকার আতংকিত কৃষকরা।জ