মো: মাইদুল ইসলাম
“না ” এর চেয়ে নারীর শক্তি বেশি ঠিক এমনটাই প্রমান করেছেন নার্গিস বেগম। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সর্দার পাড়ার ভাবির হোটেল সবার চেনা। প্রান্তিক মানুষ থেকে রিক্সা ওয়ালা, অটোরিকশা ওয়ালা, ছাত্র -ছাত্রী সবার পরিচিত ভাবির হোটেল। আর ভাবির হোটেল যেন সকলের কাছে, সাকালের নস্তা, দুপুরে মিল বা রাতের মিলের এক আস্থার জায়গা। এই জায়গায় ভাবির আসতে বা সবার আস্থাভাজন হয়ে ওঠার পিছনে আছে দীর্ঘ এক সংগ্রামের গল্প । সাল ২০০৬ ভাবির পরিবারে অভাব যেন নিত্যদিনের সঙ্গী, কারন ভাবির স্বামী হানিফ মিয়া বেকার, যার কারনে পরিবারে অভাব আর ও প্রকট হয়ে গিয়েছিল। এ দিকে হানিফ মিয়া বেকার হবার কারনে তার বাবা, তার( হানিফের) স্ত্রী ও দুই সন্তানদের প্রতিপালন করতে অস্বীকার করে।অভাবের কারনে পারিবারিক অশান্তি ও যেন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাড়িয়ে ছিল । একটা পর্য়ায়ে ভাবি ভাবতে থাকে তাকেই কিছু করতে হবে এবং তিনি ২০০৭ সালে আশা ব্যাংক থেকে মাত্র ৪০০০ টাকা কিস্তিতে লোন নিয়ে ব্যাবসা শুরু করেন। তখন দোকান ছিল চালা-ঘরের , কোন বিদ্যুত ছিল না, মোমবাতি ও কুপি জ্বালিয়ে তিনি দোকানী করেছেন। যখন তিনি ব্যাবসা শুরু করেন তখন মেস ছিল শুধুমাত্র একটা, আর এলাকায়ে লোকজন ও কমছিল। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবার সুবাদে আশে- পাশে মেস হতে থাকে। আস্তে আস্তে তার আত্নবিশ্বাস আর ও দৃঢ় হতে থাকে। এদিকে তার পরিবার তার ব্যাবসাকে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। বাড়ির বউ রাত ১২ টা পর্যন্ত দোকানে থাকা তারা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি । এক পর্যায়ে দোকান বন্ধ কারার জন্য চাপ দিতে থাকে । গ্রামের মানুষ নানান ধরনের অশালীন মন্তব্য ও তিরস্কার করতে থাকে। কিন্তু নার্গিস বেগম জানতেন তার অভাব মোচনের একমাত্র উপায় তার নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। যার কারনে তিনি মানুষের বিরুপ মন্তব্যে কোন প্রকার কর্ণপাত করেননি। এক পর্যায়ে নার্গিস যখন তার আবস্থানে আর ও দৃঢ় ভাবে অনড় তখন তার শ্বশুর ( হানিফের বাবা) তাকে দোকানের জায়গা ছেড়ে দিতে বলেন কিন্তু নার্গিস বেগম না ছেড়ে দিলে গ্রামের মানুষ সহ তার শ্বশুরের মাঝে মাসিক ঘর ভাড়া দেয়ার চুক্তিতে একমত হয়। এদিকে দোকানের ক্রেতা দিন দিন বেড়েই চলেছে তখন তিনি সেই চালা ঘর ভেঙে ভাতের হোটেল দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমের দিকে আশানুরূপ সাফল্য না হলেও ধীরে ধীরে মেস বেশি হতে থাকে ছাত্র -ছাত্রী ও বেশি হতে থাকে। আর ভাবি শতভাগ সততার সাথে ব্যাবসা করতে থাকে। নিজের হোটেলে কর্মচারী নেন। আার দোকানকে ঘিরে আর ও কয়েকজনের কর্মস্থান হয় । আস্তে আস্তে ভাবি নিজের জন্য জায়গা কিনে দোতালা বাড়ি করেন, সন্তানদেন লেখা পড়া করাচ্ছেন। ভাবি বলেন,” আমার মতো লাঞ্চনা এই সর্দারপাড়ায় অন্য কোন মহিলা হয় নি। তবে, সকল প্রতিকুল অবস্থায় আমার স্বামী ছায়ার মতে আমাকে সহায্য করেছে এখনো করছে। ” এভাবেই চলছে ভাবির হোটেলে ভাবির সকাল ৬ টা থেকে রাত ২ টা পর্যন্ত তার সংগ্রামের অভিযান।
Leave a Reply