সিদ্দিকুর রহমান, বেরোবি প্রতিনিধি:
প্রকৃতি থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। প্রকৃতিতে এখন বিরাজ করছে গ্রীষ্মকাল। খাঁ খাঁ রোদ্দুর, তপ্ত বাতাস, চারদিকে নিঝুম, নিঃস্তব্ধ, ঝিমধরা প্রকৃতি, ঘামে দরদর তৃষ্ণার্ত পথিক মাঝে মাঝে আকাশে মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টির দেখা মিলছে না। সূর্যের প্রখর তাপে সমস্ত প্রকৃতি যেন নির্জীব হয়ে ওঠে। দূর আকাশে পাখনা মেলে চিল যেন বৃষ্টিকে আহ্বান জানায়। গাছের নিচে মানুষের নিঃশব্দ অবস্থান গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরের পরিচিত দৃশ্য। তবে জনজীবন অতিষ্ঠ হলেও গ্রীষ্ম তার নিষ্প্রাণ রুক্ষতাকে ছাপিয়ে প্রকৃতিতে মেলে ধরেছে অপার সৌন্দর্য। যা থেকে বাদ যায়নি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসও।
৭৫ একরের পুরো ক্যাম্পাস যেন সেজেছে নতুর রূপে। গ্রীষ্মের হলুদ রঙের সোনালু, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা, জারুলের বেগুনি পাপড়ির নমনীয় কোমলতা আর দৃষ্টিনন্দন বর্ণোচ্ছটা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তুলেছে। বেগুনি আভায় সেজেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর প্রাঙ্গন। মনে হবে গাঢ় বেগুনি রঙের বন্যা বইছে সেখানে। বকুলের ঘ্রাণে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এলাকা ।
গাছে গাছে দুলছে দর্শনেন্দ্রীয় শীতল করা কৃঞ্চচূড়া,জারুল,হিজল,বকুল, সোনালুসহ নানান প্রজাতির ফুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ( নির্মানাধীন) ২নং গেইটের দুই পার্শ্বে, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণে, স্বাধীনতা স্মারক মাঠের উত্তর পাশে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ।
গাছগুলোর শাখায় শাখায় ফুটেছে রক্তবর্ণ ফুলের সমাহার। ফলে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে বহুগুণ। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে সেজেছে কৃষ্ণচূড়ারোড। কৃষ্ণচূড়া যেন সূর্যের সবটুকু উত্তাপকে শুষে নিয়ে সৌন্দর্যের এক অভিনব উত্তাপ ছড়াচ্ছে পুরো ৭৫ একরে। সে উত্তাপেই পুড়ে যাচ্ছে সৌন্দর্য বিলাসী সকলের মন।
ক্যাম্পাসের প্রকৃতি সম্পর্কে বিশ্বদ্যিালয়ের “ইইই“ বিভাগের শিক্ষার্থী মমিতুর জামান বলেন, ‘গ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড খরতাপে প্রাণ যেন নির্জীব হয়ে যায়। এমন সময় সোনালু গাছের নিছে বসে হালকা দখিনা হাওয়ার সাথে মিতালী যেন দেহে ফের প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। গ্রীষ্মকালের এই অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি যে কারো মন ভালো করে দিবে নিমিশেই।’
গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তন্নী বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর মাত্র কয়েকদিন হয় ক্যাম্পাসে এসেছি। এসেই দেখি নানা রঙের ফুলে-ফলে ভরেছে ক্যাম্পাস। সেজেছে নতুন সাজে। রংপুরের এই তীব্র গরমেও বর্ণিল এই ক্যাম্পাসে যেন নিজেকে খুঁজে পাই নতুন রূপে।‘
রক্তরাঙ্গা কৃষ্ণচূড়ার অনিন্দ্য সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার ববি বলেন, ‘দীর্ঘ ছুটিতে আছে প্রাণের এই ৭৫ একর। ছুটি শেষে ক্যাম্পাসের প্রাণ শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে যেনো অপরুপ সাজে সেজেছে প্রাণের কৃষ্ণচূড়া রোড। দুই পাশে সারি সারি করে লাগানো এই মাঝারি আকারের কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো মনমাতানো সৌরভ দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে অনেকটা ফাঁকা এই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ছে এই সবুজের বুকে লাল কৃষ্ণচূড়া পুষ্পরাজি। ঋতুরাজ বসন্ত পেরিয়ে গেলেও মনে হচ্ছে প্রতিটি দিনই এখন বসন্ত জারুল, কৃষ্ণচূড়া, শ্বেতশুভ্র কাশফুল আর সোনালু বহুগুণে রূপবতী করে তুলেছে প্রাণের এই ৭৫ একরের ক্যাম্পাসকে।’
মো: সিদ্দিকুর রহমান
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর