সুমন ইসলাম,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও জেলা যুবলীগের দুই নেতাকে ধরে নিয়ে থানায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে। থানায় হাতকড়া পরিয়ে ও চোখে কাপড় বেঁধে মারধর করার অভিযোগ করেছেন জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান পুলক। এতে তার এক হাত ভেঙে গেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের কাছে ওই অভিযোগ করেন পুলক। নির্যাতনের শিকার আরেকজন হলেন জেলা যুবলীগের ক্রীড়া সম্পাদক খালিদ সিরাজ রকি।
তবে ওসি কামাল হোসেন বলছেন, আটকের পর ছেড়ে না দেওয়ায় নিতান্ত মিথ্যা অভিযোগ করছেন তারা। এর আগে ২৯ এপ্রিল (শনিবার) রাতে ঠাকুরগাঁও জেলার পাবলিক ক্লাব মাঠ থেকে যুবলীগ নেতা পুলক ও রকিকে পিকআপে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে জামিনে বের হয়ে মঙ্গলবার (২ মে) চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন পুলক।
ঘটনা সম্পর্কে আসাদুজ্জামান পুলক জানান,শনিবার (২৯ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে তার বাড়ির পাশের পাবলিক ক্লাব মাঠে বৈশাখী মেলায় রকির সঙ্গে পুলিশে ঝামেলা হওয়ার কথা ফোনে জানতে পারেন। সেখানে গিয়ে রকিকে টানাহেঁচড়া করে পুলিশের গাড়িতে তুলতে দেখেন। তিনি এর কারণ জানতে চাইলে তার ওপর উত্তেজিত হয়ে অন্য পুলিশ সদস্যদের ডাকেন ওসি। পরে তিনি সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে তার মোটরসাইকেলের চাবি ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় তিনি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন পুলিশ গিয়ে তার কোমর ধরে ফেলে। পরে তাকে পিকআপে তুলে থানায় নিয়ে যায়।
আসাদুজ্জামান পুলক বলেন, ‘থানায় আমাকে নিয়ে অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ওসি। এর একপর্যায়ে আমার চোখে গামছা বেঁধে এবং হাতে হাতকড়া পরিয়ে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। এতে একটি লাঠি ভেঙে ফেলার পরে আরেকটি লাঠি দিয়ে ওসি ও পুলিশ কর্মকর্তারা আমাকে পেটান। আমি নিস্তেজ হয়ে পড়লে তারা পেটানো বন্ধ করেন। মারধরের আমি প্রচণ্ড আহত হই, আমার হাত ভেঙে যায়।’
যুবলীগ নেতা পুলক আরো জানান, মারধরের পর শনিবার রাত ৩টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আবার থানায় নিয়ে আসা হয়। পর দিন রবিবার সকাল ৯টায় তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। আমার অবস্থা দেখে জেল কর্তৃপক্ষ আমাকে নিতে চায়নি। পরে ওসি কামালের তদবিরে আমাকে কারাগারে নেন তারা। ভাঙা হাত নিয়েই আমি জেলের ভেতরে থেকেছি।
পরে মঙ্গলবার (২ মে) জামিনে বের হয়ে তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে শাস্তি ও প্রত্যাহার দাবি করেন তিনি।
পুলকের মা আফরোজা বেগম বলেন, ‘ওসি এ (ঠাকুগাঁও সদর) থানায় যোগ দিয়েছেন মাত্র সাত মাস হয়েছে। তারা আমার ছেলের সঙ্গে যা করলেন, তা ঠাকুরগাঁওবাসীর জন্য লজ্জার। আমরা যে সামাজিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তার শিকার হলাম, এর সঠিক বিচার চাই।’ পুলক সুস্থ হলে বিচারের জন্য আদালতে যাবেন বলে তিনি জানান।
শহরের কালিবাড়ির বাসিন্দা লোকমান হোসেন ফাহিম বলেন, ‘শনিবার (২৯ এপ্রিল) রাতে বৈশাখী মেলায় গিয়ে দেডষ, পুলক ভাই ও কামাল ওসি কথা বলছেন। একটু পরেই কয়েকটি গাড়িতে পুলিশ এসে পুলক ভাইকে হাতকড়া পরিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে নিয়ে যায়। তখন তিনি স্বাভাবিক ও সুস্থ ছিলেন। পরে খবর পেয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) হাসপাতালে এসে দেখলাম, তার পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো দাগ হয়ে আছে। তার হাতও ভেঙে গেছে।’
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল কর্মকর্তা নাসরুল ইসলাম বলেন, ‘আসাদুজ্জামান পুলক হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের ক্যাবিনে ফিজিক্যাল অ্যাসালড রোগী হিসেবে ভর্তি আছেন। তার বাম হাতের একটি হাড় ভেঙে গেছে। এর চিকিৎসা তাকে দেওয়া হচ্ছে।’
ঘটনা সম্পর্কে সদর থানার ওসি কামাল হোসেন বলেন, মদপান করে বৈশাখী মেলায় নারীদের সঙ্গে অশ্লীল আচরণের খবরে সেখানে গেলে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়। পথে মেলা কর্তৃপক্ষ ও লোকজনের সহযোগিতায় রকি ও পুলক নামে দুজনকে আটক করা হয়। এ সময় উপস্থিত জনতা রকি ও পুলককে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করে। তাদের থানায় আনার পর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
নির্যাতনের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি কামাল হোসেন বলেন, ‘নির্যাতন করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগটি নিতান্তই মিথ্যা। তারা চেয়েছিল আসামিদের ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে। আমরা দেখি, থানায় পুলকের নামে ৫টি ও রকির নামে ৯টি মামলা রয়েছে। সেদিন যদি আমরা তাদের ছেড়ে দিতাম, তাহলে তারা আমাদের নামে এই মিথ্যা অপবাদ দিত না।’
ওসি কামাল আরো বলেন, ‘আটকের পর দিনই আমরা তাদের আদালতে সোপর্দ করেছি। তারা জেলখানায়ও তিন দিন ছিলেন। এর মধ্যে তারা যদি জেলখানায় বা জামিনে বাইরে এসে কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, এর দায়ভার তো পুলিশ নিবে না।’
জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আবদুল মজিদ আপেল জানান, বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচারের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জেলার পুলিশ সুপার ও রংপুরের ডিআইজি জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের অনুসন্ধানে রয়েছে। প্রতিবেদনের পর আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।