পাবনা প্রতিনিধি :
“একা কোথাও যেতে পারি না। দীর্ঘদিন আগে অজ্ঞাত অসুখে দুটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। বেকার হয়ে গেছি। তিন শতাংশ জায়গার বাড়িতে ছেলেদেরই জায়গা হয় না। অথচ আগে তিন ছেলে চার মেয়ের সংসার ছিল আমার। সবার বিয়ে হয়েছে আগেই। এখন যে যার মতো ব্যস্ত। দু’পা হারিয়ে ২৬ বছর হলো পানিতেই বসবাস করছি”– কথাগুলো বলছিলেন পাবনার বেড়ার কৈটোলা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৬০)।
অজ্ঞাত রোগে সিরাজুল দুটি পা হারান ২৬ বছর আগে। তখন থেকেই ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৈটোলা পাম্পিং স্টেশনের পাশে কাগেশ্বরী নদীতে প্লাস্টিকের তেলের ড্রামের ওপর ভাসমান ডেরায় থাকেন তিনি। কষ্টে জীবনযাপন করতে হয় তাঁর। মাছ শিকার করে চলছে জীবিকা। অথচ আগে সংসারসহ সবই ছিল তাঁর। এখন কেউ তেমন খোঁজ রাখেন না। ফলে ভাসমান জীবনেই মানিয়ে নিয়েছেন তিনি।
সিরাজুল ইসলাম জানান, একসময় সাত সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটত তাঁর। হঠাৎ অজ্ঞাত এক রোগে পচন ধরে দু’পায়ে। চিকিৎসক-কবিরাজ দেখিয়েও কাজ হয়নি। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পা দুটি কেটে ফেলেন। এরপর অভাবের সংসারে সবার কাছে বোঝা হয়ে ওঠেন। একবেলা খেয়ে দু’বেলা না খেয়ে দিন পার করেছেন। একপর্যায়ে বেছে নেন মাছ ধরার পেশা। বর্ষায় মাছ ধরে সামান্য কিছু আয় হয়। তাও নিয়মিত নয়। সরকারি সহায়তা হিসেবে পান প্রতিবন্ধী ভাতা। এ টাকা দিয়ে ওষুধও কেনা হয় না।
সিরাজুলের ভাষ্য, “আমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার পা দুটিই নিয়েছেন, হাত তো আর নেননি। হাত আছে বলেই আজ কিছু একটা করে দু’মুঠো ভাত খেতে পারি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁরা গাছের নিচে ছায়ায় বসে কথা বললে সিরাজুল নৌকা নিয়ে এগিয়ে এসে কথা বলেন। পরিবার থেকেও যেন নেই। ঈদের সময় এলাকাবাসী সাহায্য-সহযোগিতা করে। এভাবে দেখতে দেখতে ২৬ বছর নদীতে কেটে গেছে তাঁর। এখন স্থায়ীভাবে বসবাস করার জায়গা ও ঘর এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে তাঁর জন্য ভালো হয়।
স্ত্রী জয়নব বেগম বলেন, অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। তাঁকে দেখভাল করতে কষ্ট হয়। প্রকৃতির ডাকে শৌচাগারে নেওয়া যায় না। কয়েকজন মিলে প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে দিয়েছেন। এখানেই থাকেন।
কৈটোলা ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন উদ্দিন বলেন, সিরাজুলকে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করবেন। ঘর বরাদ্দের কোনো প্রকল্প এলে তাঁকে দেবেন বলে জানান তিনি।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. সবুর আলী বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।