রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাটঃ
লালমনিরহাট জেলা সদরের ফকিরের তকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি তাইজুল ইসলাম পাটোয়ারী ও প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরা'র বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার সহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার প্রতীকার চেয়ে সভাপতি তাইজুল ইসলাম পাটোয়ারী ও প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরা সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে পৃথক পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাজিব সরকার ও উৎপল কুমার রায়। এ ছাড়াও উক্ত বিদ্যালয়ে আরো দুই শিক্ষিকা সভাপতি তাইজুল ইসলাম পাটোয়ারী ও প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরা’র বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের “ফকিরের তকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়”টি স্থাপিত হয়। যার বিদ্যালয় কোড : ৭২৯৫, ইআইআইএন নং-১২২৮৯৬। বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাইজুল ইসলাম পাটোয়ারী ও তার স্ত্রী বর্তমান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সদস্য সচিব জান্নাত আরা। বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার পর ২০১৬ সালে ফকিরের তকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষা) রাজিব সরকার ও সহকারী শিক্ষক (গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান) উৎপল কুমার রায়, সহকারী শিক্ষক (বাংলা) মৌসুমি খাতুন ও সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) মিনতি রানীর নিকট থেকে মোটা অংকের ডোনেশনের মাধ্যমে সভাপতি/প্রধান শিক্ষক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত চারজনকে নিয়োগপত্র প্রদান করেন।
সরকারি বিধি মোতাবেক শিক্ষক হিসেবে স্ব-স্ব পদে যোগদানের পর বিদ্যালয়ের অবকাঠামো সহ বিনা বেতন-ভাতায় যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। এর মাঝে সরকারি এম.পি.ও নীতিমালা অনুযায়ী গত ৬ জুলাই/২০২২ইং তারিখে “ফকিরের তকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়”টি এম.পি.ও তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়। এম.পি.ও তালিকায় “ফকিরের তকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়”টির নাম আসায় সভাপতি তাইজুল ইসলাম পাটোয়ারীর/প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরা ওই চার শিক্ষককের সাথে খারাপ আচারণ সহ নানান টালবাহনা শুরু করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার সহ প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ নিষেধ করেন। এমনকি এম.পি.ও অন্তর্ভূক্তির সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে টাকার বিনিময় নতুন ভাবে ওই ৪ পদে শিক্ষক নিয়োগের পায়তারা করছেন। ফলে সভাপতি তাইজুল ইসলাম পাটোয়ারী ও প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরা সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষা) রাজিব সরকার ও সহকারী শিক্ষক (গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান) উৎপল কুমার রায় লালমনিরহাট বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে পৃথক পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২৭১/২০২২ইং ও ২৭০/২০২২ইং। মামলা দুইটি বর্তমান বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সহকারী শিক্ষক (বাংলা) মৌসুমি খাতুন ও সহকারী শিক্ষক (হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা) মিনতি রানী বলেন, আমরা ৪ শিক্ষক নিয়োগ পাওয়ার আগে থেকে ১০/১২ বছর ধরে বিনা বেতনে ছাত্রীদের লেখাপড়া করিয়েছি। ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনায় অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগিতা করেছি। এখন বিদ্যালয়টি এম.পি.ও হওয়ায় সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে নতুন ভাবে শিক্ষক নিয়োগের পায়তারা করছেন।
ওই শিক্ষকরা আরো বলেন, স্বামী সভাপতি আর স্ত্রী প্রধান শিক্ষক হওয়ায় ফকিরের তকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেছেন। আমরা সভাপতি তাইজুল ইসলাম পাটোয়ারী ও প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরার বিরুদ্ধে এই মামলা করেছি আবার কেউ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ প্রদান করেছেন। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
ফকিরের তকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তাইজুল ইসলাম পাটোয়ারীর স্ত্রী প্রধান শিক্ষক ও সদস্য সচিব জান্নাত আরা বলেন, মামলা হয়েছে জানি। আমরা মামলার জবাব দিয়েছি। তারা ৪ জন শিক্ষক ইতিপূর্বে এখানে ছিল। বিদ্যালয়টি এম.পি.ও হওয়ায় পর থেকে এখানে আর তারা নেই। আগামীতে তারা এম.পি.ওর কোন সুযোগ-সুবিধা পাবে না।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার আঃ বারী বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সহ মামলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।