মোহাম্মদ মাসুদ বিশেষ প্রতিনিধি
কক্সবাজারে এলাকা হতে আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদসহ আরসা’র শীর্ষ কমান্ডার-ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান সহ আটক-২জন। ২৬ অক্টোবর-২৩ রাতে র্যাব ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর গোয়েন্দা তথ্যে উখিয়া থানাধীন কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এলাকায় অভিযানে আরসা’র শীর্ষ কমান্ডার,আরসা’র ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান মোঃ ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বী (৫০)পিতা-মৃত নুরুজ্জামান কে আটক করে।
গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর কর্মকর্তা হত্যাকান্ডসহ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র শীর্ষ কমান্ডার ও আরসা’র ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বী’সহ ০২ জন আরসা সদস্য’কে দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ কক্সবাজারের উখিয়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব; আরসা’র টর্চার সেলের সন্ধান লাভ
সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এই বছরে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার,গান কমান্ডার, অর্থ সম্পাদক, আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র একান্ত সহকারী এবং অর্থ সমন্বয়ক, মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান ও ক্যাম্প কমান্ডারসহ সর্বমোট ৭৩ জন আরসার সক্রিয় সদস্যকে র্যাব আটক করে।
গ্রেফতারকৃতদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে র্যাব এ সকল সন্ত্রাসী গ্রুপের শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ অন্যান্য সদস্যদের গোয়েন্দা নজরদারীতে আরসা’র ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান মোঃ ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বীকে আটক করে।
পরবর্তীতে তার তথ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের ০৬নং ওয়ার্ডস্থ মধুরছড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন পাহাড়ে আরসার তৈরী একটি গোপন টর্চার সেলের সন্ধানে সেখান থেকে টর্চার সেলের সদস্য মোঃ ইউনুস (২৪),পিতা-সৈয়দ হোসেন’কে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ০১টি 9mm বিদেশী পিস্তল ও ০৪ রাউন্ড গুলি,৪টি একনলা ওয়ান শুটার গান, ০২টি এলজি, ০৫ রাউন্ড ১২ বোর কার্তুজ এবং বিপুল পরিমাণ টর্চার সেলের সরঞ্জামাদি (০১টি কুড়াল, ০৩টি বিভিন্ন সাইজের প্লাস, ১টি কাঠের লাঠি, ০১টি স্টিলের লাঠি, ০১টি করাত, ০১টি নাম চাকু, ০১টি লোহার রড, ০১টি লোহার দা, ০১টি হ্যাংগিং হুক, ০১টি সিসর, ০৪টি তালা, ০৩টি বড় লোহার পেরেক, ০২টি লোহার শিকল, ০১টি রশি, ০১টি কুপি বাতি এবং সুইসহ সুতার ০১টি বান্ডেল)।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে খুন,অপহরণ ও টর্চার সেল’সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃতরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিক। আটক সালমান মুরব্বী ২০১৭ সালে সপরিবারে অবৈধপথে বাংলাদেশে প্রবেশ থাইংখালীর শরণার্থী ক্যাম্প-১৩ এর ব্লক-ডি/৪ এ বসবাস,২০১৮ সালে সে আরসার ওলামা কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ও কমান্ডার মৌলভী মোস্তাক আহম্মদ এবং মৌলভী আবু রায়হান এর সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ (আরসা) এ যোগদান করে। সংগঠনে যোগদানের পর আরসার শীর্ষ নেতাদের নিকট অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
পর্যায়ক্রমে সে ১৩ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক জিম্মাদার, হেড জিম্মাদার এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরসার ওলামা বডির প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব,তার নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে শরণার্থী শিবিরে আরসার দাওয়াত গ্রুপের অন্যতম সদস্য মৌলভী লাল মোহাম্মদ এর নেতৃত্বে ১০/১২ জনের একটি গ্রুপ তৈরী করে; যারা শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী তরুণ ও যুবকসহ সাধারণ রোহিঙ্গাদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে অথবা জোরপূর্বক আরসায় যোগদান করতো। তার এই কার্যক্রমের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা আরসায় যোগদান করেছে বলে জানা যায়। এজন্য সে প্রতি মাসে আরসা হতে মোটা অংকের টাকা পেতো এবং তার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওলামা বডির অন্যান্য সদস্যদের জন্য নির্ধারিত টাকা আসতো বলে জানা যায়। সে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ ও আরসার সেকেন্ড ইন কমান্ড ওস্তাদ খালেদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতো। সে আরসার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত ছিল। উক্ত গ্রুপসমূহের মাধ্যমে শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাকে শরণার্থী শিবিরে আরসার কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করতো। শরণার্থী শিবির ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোন ধরণের হামলা বা নাশকতার জন্য সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার সদস্যরা সালমান মুরব্বীর পরামর্শে হামলা ও অরাজকতা সৃষ্টি, হত্যাকান্ড, অপহরণসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘঠিত করতো। এ সকল অপরাধের বিষয়ে সালমান মুরব্বী আরসা প্রধান আতাউল্লাহ’র নিকট থেকে অনুমতি গ্রহণ করতো। গ্রেফতারকৃত সালমান মুরব্বীর নেতৃত্বে ওলামা বডির অন্যান্য সদস্যরা আরসার নতুন সদস্য যোগদানে উদ্বুদ্ধ করণের পাশাপাশি আরসা হতে বের হয়ে বিভিন্ন নেতৃত্বদানকারীদের হত্যার পরিকল্পনা, হামলা, ভয় ভীতি প্রদর্শন করতো। এছাড়া শরণার্থী ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহে অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টিসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করতো। আরসা ওলামা বডির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ সকল অপরাধের ফলে শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত শরণার্থীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো। কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তারা তাকে অপহরণ ও হত্যাসহ ক্ষেত্র বিশেষ লাশ গুম করতো বলে জানা যায়।
আরো জানা যায় যে, আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসার আধিপত্য এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে আরসা ২০১৯ সালের শেষের দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে ও ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড় ও গহীন জঙ্গলে টর্চার সেল/কাচারী স্থাপন করে। আরসার কমান্ডার আবু আনাছ সর্বপ্রথম টর্চার সেলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করে।
Leave a Reply