নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম:
দীর্ঘ এক বছরের আগের ঘটনায় সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা,জিম্মি মার মুখী আচরণ ও অনিয়মে বিতর্কিত চসিক কাউন্সিলর জসিম সাময়িক বরখাস্ত।
সরকারি নির্দেশনায় অপরাধী দুর্নীতি অনিয়ম অভিযোগে জড়িত অভিযুক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এরই ধারাবাহিকতায় জিরো টলারেন্স রুলস রেজুলেশন অনুযায়ী বাস্তবায়িত হল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ। (বেলা) প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে হামলা চসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম ওরফে জসিমকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ।যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এই আদেশ জারি করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
২৫,জানুয়ারি,বুধবার মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তিনি উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িতে ঢিল ছোড়া ও হুমকি দেওয়ার মামলায় অভিযোগপত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরুল আলমকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে মন্ত্রণালয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. আব্দুর রাফিউল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম জসিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরের আকবর শাহ থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯-এর ধারা ১২(১) অনুযায়ী তাঁকে স্বীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।
বরখাস্ত প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে বুধবার রাতে জহুরুল আলমকে মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসংঙ্গ:বেলার প্রধান নির্বাহী রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে বেলার একটি প্রতিনিধিদল গত ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ইং আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শনে গেলে কাউন্সিলর জহুরুল ও তাঁর সহযোগীদের মারমুখী আচরণের শিকার হন। এ ঘটনায় রিজওয়ানা হাসান আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আকবর শাহ থানা-পুলিশ গত বছরের ১২ জুন ছয়জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এতে অভিযোগপত্রে কাউন্সিলর জহুরুলকে ১ নম্বর আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন জহুরুলের সহযোগী বিল্লাল হোসেন, আবু নোমান, সাইফুদ্দিন ভূঁইয়া, আনিছ চৌধুরী ও মো. শাকিল। তাঁদের মধ্যে নোমান ছাড়া বাকিরা জামিনে আছেন।
দীর্ঘ মাস আগে গত ৩০ আগস্ট (বেলা) প্রধান নির্বাহী নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও তার সফর সঙ্গীদের উপর হামলার মামলায় এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়। তারপরেও এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। যেখানে আইনানুয়ী ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগপত্র গৃহিত হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরখাস্ত করতে পারবে। অথচ রহস্যজনক কারণে অভিযোগপত্র জমার ৫মাস পেরিয়ে গেলেও তাকে বরখাস্তের কোনো উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তরও।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন আকবর শাহ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহেদ উল্লাহ জামান। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পাহাড় কাটা এলাকা পরিদর্শনে গেলে কাউন্সিলর জহুরুল আলমের নেতৃত্বে আসামিরা বেলার প্রধান নির্বাহীসহ প্রতিনিধিদলকে বাধা দেয়,গাড়ি আটকে রাখে ও বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়। আটকে রাখা সেই গাড়ি পুলিশ গিয়ে ছাড়িয়ে নেয়।
এছাড়াও উক্ত কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে পাহাড় কেটে প্লট বানিজ্য করে পরিবেশ ধ্বংস করার বিষয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় এক সাংবাদিককে মুঠোফোনে হুমকি ও হয়রানি মুলক মামলা করার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
বিতর্কিত সমালোচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম এর আগেও তিনি একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দ্বারা একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি নানা ভাবে বিভিন্ন বেআইনি কর্মকান্ডে জড়িয়ে মামলায় সহ বিশ্বর অভিযোগ। রয়েছে নানা অনিয়মে অসংখ্য আপত্তি অভিযোগে শীর্ষ আলোচিত। রয়েছে নানা অপরাধের যোগসাজেসে বিতর্কিত এই কাউন্সিলর। দুই মেয়াদে গত ৯ বছর ধরে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি তিনি। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতিও; তবে জনপ্রতিনিধির চেয়েও চট্টগ্রামে ‘পাহাড়খেকো’ হিসেবেই বেশি পরিচিত এই কাউন্সিলর। তার বিরুদ্ধে ২ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ার পরেও কোনো এক অদৃশ্য জাদুবলে বহাল তবিয়তে আছেন এই কাউন্সিলর। এমনকি তার বিরুদ্ধে চসিকের গঠন করা তদন্ত প্রতিবেদনও শেষপর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
Leave a Reply