মোঃ জুলহাস উদ্দিন হিরো, শেরপুর প্রতিনিধি।
মৃদু বাতাস ও প্রচন্ড ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে শেরপুরে আলুর ক্ষেতে পচন রোগ ‘লেট ব্লাইটের’ আক্রমণ হয়েছে। ছত্রাকনাশক ও বিষ প্রয়োগ করেও এ সমস্যা দমন করতে পারছেন না বলে জানান কৃষকেরা।
এতে করে আলুর আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এলাকার কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ বাজার থেকে ছত্রাকনাশক এনে ইস্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষকদের অভিযোগ, এতেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের হেরুয়া বালুরঘাট গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক ২৫ শতাংশ জমিতে গোল আলুর চাষ করেছেন।
মালেক জানান,কর্জ ধার করে ২৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন তিনি। কিন্তু তার আলু ক্ষেতে আলু ধরার শেষ সময়ে গাছ পচে মরে যাচ্ছে। ফলে আলুর ফলন না হওয়ার আশঙ্কায় তিনি। বাজার থেকে ছত্রাকনাশক ও বিষ এনে স্প্রে করছেন কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। ফলে তিনি চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
লছমনপুর ইউনিয়নের কুসুমহাটির কৃষক আমির আলী বলেন, ‘আমি ছয় কাঠা জমিতে আলুর চাষ করেছি। ৩০ হাজার টাকা খরচ আমার, কিন্তু ক্ষেততো নষ্ট হয়ে গেছেগা। এহন আমি কি করুম?’
কৃঞ্চপুর দড়িপাড়ার কৃষক তোতা মিয়া বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করে ৭০ হাজার টাকা খরচ করেছি। এ টাকা কেমনে যে তুলি চিন্তায় আছি। আমরা আলু চাষ করে সংসারের খরচ চালাই, পোলাপানের লেখা পড়ার খরচ যোগাই। এহন ক্ষেত তো নষ্ট হইয়া গেল।’
একই অবস্থা কৃষক সাদা মিয়ার। তিনি বলেন, ‘বাজার থেকে ছত্রাকনাশক ও ঔষধ এনে ইস্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আলুর ক্ষেত মরেই যাইতাছে। উল্টো অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে।’
পৌরশহরের উত্তর গৌরীপুরের সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমার প্রতি কাঠায় পাঁচ হাজার টাকা করে তিন কাঠায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শীত আর কুয়াশায় আমার আলুর ক্ষেত মরে যাইতাছে গাছ। বাজার থেকে ওষুধ নিয়ে আইনা ছিটাইতাছি। কোনো কাম হইতাছে না।’
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলায় পাঁচ হাজার ২২২ হেক্টর জমিতে গোল আলুর আবাদ করা হয়েছে।
শেরপুরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, দিন এবং রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে আলু ক্ষেতে এ রোগ দেখা দিচ্ছে। বাজার থেকে কৃষকদেরকে ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ কিনে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে এ রোগের সমস্যা থাকবে না বলে জানান তিনি।
Leave a Reply