নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের আত্মস্বীকৃত দূর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে গোপনে দাতা সদস্য নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
১৮৫৭ সালে নড়াইলে জমিদার কতৃক প্রতিষ্ঠিত শত কোটি টাকার সম্পদে ভরপুর নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়টিতে ১৬৭ বছরেও কোন দাতা সদস্য না থাকলেও আত্মস্বীকৃত দূর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অতি গোপনে বর্তমান কমিটির এক সদস্যকে দাতা সদস্য বানিয়েছেন। এই দূর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের একের পর দূর্নীতিতে ধংসের দ্বারপ্রান্তে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়টি। ইতিপূর্বে এই আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ শিক্ষক অনেকবার দূর্নীতি করে মৌখিকভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। ছাত্রদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করে স্কুলের মধ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্জিত হয়েছেন।
অত্র বিদ্যালয়ের বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এস সি প্রোগ্রামের বোর্ড পরীক্ষায় কেন্দ্রে প্রবাসী ছাত্রের পরীক্ষা নিজে লেখে দেওয়ার সময় ধরা পড়ে পা জড়িয়ে ধরে নাকে খত দিয়ে নিজে পার পেলেও কেন্দ্রেটি বাতিল হয়ে যায়। ব্যবহারিক পরীক্ষায় ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা আদায়, অফিসের কথা বলে ব্লাকমেইল করে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ নানা ধরনের দুর্র্নীতির জন্য শেষ বারের মতো ক্ষমা চেয়ে আত্মস্বীকৃত দূর্নীতির মুচলেকা দেন। জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে দূর্নীতির সত্যতা মিললেও অদৃশ্য শক্তির বলে বহাল তবিয়তে থেকে করে যাচ্ছেন একের পর এক দূর্নীতি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে স্কুল ছুটিকালীন সময়ে গোপনে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির বিদুৎসাহী নীলাশু শেখর (নিপু) সরকারকে দাতা সদস্য নেওয়া হয়েছে। বাইরের লোক তো দূরের কথা, যেটা বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারিরাও জানেন না।
এসব বিষয়ে নড়াইল জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে একই বিদ্যালয়ের আত্মস্বীকৃত দূর্নীতিবাজ সহকারি প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) সুমন কুমার মন্ডল মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পাচ্ছেন মর্মে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় গত ২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে সরেজমিনে তদন্ত করি। তদন্তে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকবৃন্দের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য গ্রহন করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের দূর্নীতির সত্যতা মেলে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্যে উদাসীনতা প্রকাশ পেয়েছে, যা তদন্ত কাজে অসহযোগিতার শামিল। সার্বিক দিক বিবেচনায় সুমন কুমার মন্ডলকে বাদ রেখে অন্য বৈধ প্রার্থীদের নিয়ে নিয়োগ প্রত্রিয়া সম্পন্ন করা যেতে পারে বলে জেলা শিক্ষা অফিসার তাঁর তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
জেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদন গোপন রেখে গত ৪ জানুয়ারী সাজানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে আবারও দূর্নীতিবাজ শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে অভিযোগে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দূর্নীতির বিষয়ে তদন্তের প্রতিবেদন সম্পর্কে আমার জানা নেই। আর দাতা সদস্যের বিষয়টি আমি স্কুলের নোটিশ বোর্ডে দিয়েছি।
গোপনে দাতা সদস্য নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত হয়েছে, আরেকটা তদন্ত চলমান রয়েছে। গোপনে দাতা সদস্য নেওয়ার বিষয়টি আমি পরোক্ষভাবে শুনেছি, অফিসিয়ালি আমার কোন কিছু জানা নেই। তবে, দাতা সদস্য আহ্বান করার নিয়ম হলো নোটিশ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জানাতে হবে এবং বিদ্যালয় ক্যচমেন্ট এরিয়ায়, জনসমাগম স্থানে মাইকিং করতে হবে। তাছাড়া এখন, ডিজিটাল যুগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করা উচিত। এসব যদি না করা হয়, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।