রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাটঃ
সম্প্রতি পাঁচ সাংবাদিকদের অফিসে আটকে রেখে মামলার হুমকি দেওয়া লালমনিরহাট সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের বদলির আদেশ এখনো কার্যকর করা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে লালমনিরহাট সদর উপজেলা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় বদলির আদেশ দেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার। কিন্তু সে আদেশ না মেনে আজ মঙ্গলবারও তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলায় কর্মরত আছেন।
আদেশের পরেও এসিল্যান্ড বদলি না হওয়ায় গতকাল সোমবার লালমনিরহাট প্রেসক্লাবে জরুরি সভা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে তারা জানিয়েছেন, এসিল্যান্ডের বদলির আদেশ কেন্দ্র করে কিছু তরুণ এসিল্যান্ডের পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে সাংবাদিক সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব তরুণ বিএনপি, জামায়াত ও আহলে হাদীস সমর্থিত পরিবারের সদস্য। এসিল্যান্ডের বদলির আদেশে বলা হয়েছে "অবিলম্বে এই আদেশ কার্যকর করা হবে" কিন্তু এখনো তা কার্যকর করা হয়নি। তার বদলি বাতিলের জন্য একটি সুবিধাবাদী পক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ৪০ মিনিট পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অফিস গেটের তালা খুলে সাংবাদিকদের মুক্ত করেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ওই সহকারী কমিশনার সাংবাদিকদের "দালাল" বলে অপমান করতে থাকেন। এসময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসকের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা সকলে ঘটনাস্থলে ত্যাগ করেন।
এদিকে ওই দিনে ক্ষিপ্ত হয়ে পিছনে থাকা একটি টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সনের মোটরসাইকেল আটকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার।
এ ঘটনার পর জেলার সংবাদকর্মীরা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টিএম মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। অভিযুক্ত সহকারী কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবরোধ তুলে নেন।
মাই টিভি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি মাহফুজ সাজু জানান, এসিল্যান্ড আমাদের অবর্ণনীয় হেনস্থা করেছেন। এডিসি রেভিনিউ অফিসের তালা খুলে আমাদের মুক্ত না করলে সেদিন এসিল্যান্ড আমাদেরকে জেলে পাঠিয়ে দিতেন। তার বদলি দ্রুত কার্যকর না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। বদলি ঠেকাতে তিনি নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। এসিল্যান্ডের বদলি দ্রুত কার্যকর ও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, এসিল্যান্ডের বদলির আদেশ দ্রুত কার্যকর করা হবে। লালমনিরহাট সদর উপজেলায় যোগদান করতে বলা হয়েছে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার এসিল্যান্ডকে। লালমনিরহাটে তার যোগদানে কিছুটা দেরি হওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার এসিল্যান্ডের বদলির আদেশ কার্যকর করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এ আদেশ অবশ্যই কার্যকর হবে।