সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে আম গাছের মুকুলে সবেমাত্র গুটিকড়ালি দেখা দিয়েছে। ফলে চাষিরা অগ্রিম লাভের ভাগ গুণতে শুরু করেছেন। তবে, এবার শীতের তীব্রতাও দেরিতে আমের মুকুলে গুটিকড়ালি বেধেঁছে। এরপরও সঠিক পরিচর্যা আর অনুকূল আবহাওয়ার প্রশংসা করছেন চাষিরা।
মূলত ফাল্গুনের শুরু থেকে আমগাছে মুকুল দেখা দেয়। চাষিদের মতে শীতের তীব্রতা থাকলে আমগাছে মুকুল বের হতে দেরি হয়। তাই এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার ফলে উপজেলার প্রায় আমগাছে মুকুল ধরেছে। এসব মুকুলে আমের গুটি কড়ালি লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় কৃষি অফিসের তথ্যমতে জানা গেছে, পুরো উপজেলায় দেড় শতাধিক আমের বাগান রয়েছে। এসব বাগানে প্রতিবারের ন্যায় এবারো মুকুলে আমের গুটি কড়ালি বেঁধেছে। তবে, একবার কোন আমগাছে বেশি আম ধরলে পরের বার আম কম ধরে একে বলা হয় ‘অফইয়ার’। একারণে যেসব আম গাছে গত বছর বেশি আম ধরে ছিল। এবার সেসব আম গাছে তেমন আমের মুকুল দেখা দেয়নি।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বেশ কয়েক জায়গার আম বাগানে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ আমগাছে মুকুল বের হয়েছে। তবে, এবারে কয়েক দফায় আকাশের বৃষ্টিতে মুকুল বেঁধেছে ভাল। স্থানীয় কৃষি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তারা চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঠিক পরামর্শ প্রদানে পর্যাপ্ত পরিচর্যায় আমের গুটি কড়ালি বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
তানোর পৌর এলাকার চাঁদপুর গ্রামের আম বাগানের মালিক আবদুল গনি মিয়া জানান, গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় আমগাছে মুকুল ধরেছে এবং আমের গুটিকড়ালি দেখা যাচ্ছে। তানোর পৌরসভার কাউন্সিলর মুনজুর রহমান বলেন, ঠিকমত কীটনাশক ও পরিচর্যার ফলে এবার বিভিন্ন এলাকার আমগাছে গতবারের চেয়ে মুকুলের পাশাপাশি আমের গুটিকড়ালি বেশি ধরেছে।
উপজেলার কলমা ইউনিয়নের আমচাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীতের দাপট বেশি থাকার পরও এবার আমগাছে মুকুল পর্যাপ্ত লক্ষ্য করা গেছে। একটু দেরি হলেও বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁন্দুড়িয়া ইউপির কৃষক মনোয়ার মনটু তিনি জানান, আমগাছের মুকুলে যে পরিমান কড়ালি বেঁধেছে যদি নষ্ট না হয় তাহলে এই এলাকায় আমের এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। আম চাষিরা বাগানে পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবহার করায় গতবারের তুলনায় এবার কড়ালি বেশি দেখা যাচ্ছে। সেইসাথে আমের গুটি কড়ালিও কম নয়। যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হয় তাহলে আমের কড়ালি অনুপাতে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এব্যাপারে তানোর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন জানান, আবহাওয়া স্যাঁতসেঁতে হলে ম্যাঙ্গোহুপা নামক এক ধরণের পোকার আক্রমন শুরু হয়। তখন এ পোকা আমগাছের মুকুলের রস চুসে খাই। এতে মুকুল কালো রঙ্গের হয়ে ঝরে পড়ে। আবার কুয়াশার কারণে ছত্রাকের আক্রমন হয়ে থাকে এতে মুকুল নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এবছর এমন কোন রোগ বালাইয়ের আক্রমন এখনো পর্যন্ত লক্ষ্যকরা যায়নি। আমচাষীদের মতে প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় যদি না আসে তাহলে এবার তানোর উপজেলায় আমচাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। এছাড়া সঠিক সময়ে আমচাষিরা কীটনাশক ব্যবহার করে আমগাছের মুকুল পরিচর্যা করেছে। তাই এবার দেড় শতাধিক আমের বাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় আমের মুকুল তুলনা মূলক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।