স্টাফ রিপোর্টার:
শেরপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরম বিষোদগারকারী এবং যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া কামারুজ্জামানের সহযোগী, মাদ্রাসা শিক্ষক ও দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক মো. মেরাজ উদ্দিন (৫২) কে এবার আওয়ামী লীগে বরণ করে নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে শহরের নিউমার্কেট এলাকায় আয়োজিত এক যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. ছানুয়ার হোসেন ছানু তাকে ফুলের শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন। মেরাজ উদ্দিন ছাত্রজীবনে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল ও পরবর্তীতে যুবদলের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত জামায়াত ঘরানার সাংবাদিক হিসেবেই কাজ করছেন। পেশায় তিনি জামায়াতের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত এক দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জেলা জামিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্যদিকে জামায়াত সমর্থক সাংবাদিক মেরাজের যোগদান সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক। এছাড়া তার এই যোগদানকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে যোগদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক দেবাশীষ ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মো. মেরাজ উদ্দিন। ওইসময় জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট একেএম মোছাদ্দেক ফেরদৌসী, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত কুমার দে ভানু, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, সদর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক ভিপি মোহাম্মদ বায়েযীদ হাছান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মেরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর আওয়ামী লীগে যোগদানের কথা বলা হলেও এদিন যোগদান করেন শহর জাসদের সাধারণ সম্পাদক টুকন সাহা, বিএনপি সমর্থক পিটার চৌধুরী ও সাংবাদিক আলমগীর হোসেন এবং জামায়াত সমর্থক মো. মানিক মিয়াসহ ৬ জন।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক বলেন, ওই যোগদান সম্পর্কে তিনি ও জেলা আওয়ামী লীগ কিছু জানেন না। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার সুস্পষ্ট উপেক্ষা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র এমপি তার সমর্থকদের পাল্লা ভারি করতে জামায়াত-বিএনপির লোকজনকে বরণ করেছেন।
জানা যায়, সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের হেরুয়া বালুরঘাট গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মেরাজ উদ্দিন কলেজ জীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে শেরপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক ও জেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জেলা শ্রমিকদলের সাংঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৯০-এর দিকে ছাত্রদল নেতা খোকন স্মরণে প্রকাশিত ‘রক্তিম সূর্য’ নামে স্মরণিকায় বঙ্গবন্ধুর চরম বিষোদগার করে তার ‘গণতন্ত্রের ২১ বছর’ শীর্ষক একটি লেখা ছাপা হয়। সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বৈরাচার এবং ৭৫ এর পট-পরিবর্তনকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সেইসাথে ৭৫-৯৬ সময়কালকেই গণতন্ত্রের ২১ বছর উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের ব্যাপক বিষোদগার করা হয়।
১৯৯১-৯২ সালের দিকে তিনি জামায়াত পরিবারে বিয়ে করেন এবং জামায়াত সমর্থক এক সাংবাদিক নেতার হাত ধরে সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন। সেই সুবাদে তিনি বিএনপির মুখপত্র দৈনিক দিনকালের শেরপুর প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন। ওই অবস্থায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আনুকূল্যে প্রতিষ্ঠিত একটি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথেও জড়িত হন। সেইসাথে জমিয়াতুলের মুখপত্র দৈনিক ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়ে এখন পর্যন্ত কর্মরত রয়েছেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান ও বিএনপি দলীয় তৎকালীন হুইপ আলহাজ্ব মো. জাহেদ আলী চৌধুরীর হাত ধরে সরকারি গণমাধ্যম বিটিভির প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পান। ওইসময় হুইপ জাহেদ আলী চৌধুরীর সাথে তার যতোটা না সখ্যতা ছিল, তার চেয়ে বেশি সখ্যতা ছিল কামারুজ্জামানের সাথে। তার সাথে একই গাড়িতে উঠে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা এবং বিটিভির খবরে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তিনি কামারুজ্জামানের স্থানীয় প্রেস সচিব হিসেবেও আলোচিত হতে থাকেন।
ওইসময়ে ক্ষমতার নাম ভাঙ্গি্য়ে নিজ এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খোকনসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে হয়রানীর অভিযোগ উঠে। কেবল তাই নয়, ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শনে কামারেরচর এলাকায় গেলে তার গাড়িবহরে হামলা ও নাশকতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধেও থানায় মামলা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি জামায়াতের অঙ্গন ছেড়ে ক্ষমতাসীন নেতাদের আনুকূল্য আদায়ের অপচেষ্টায় মাতেন। এক পর্যায়ে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক হুইপ-এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিকের নামে তার নিজ এলাকায় আতিউর রহমান মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এ সুবাদে কাছে পৌঁছে তিনি দুদফায় শেরপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের পদ হাসিল করেন।
২০২১ সালের প্রথমার্ধে নিজ এলাকায় শ্রীমত আলী নামে তার এক বয়স্ক আত্মীয় প্রতিপক্ষের হাতে খুন হলে ওই মামলায় রেজাউল করিম সাদাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েকজন শিক্ষক ও নেতা-কর্মীকে হয়রানীমূলকভাবে জড়ানো হয়। অন্যদিকে ওই মামলার পর আসামি ও তার আত্মীয়-স্বজনরা বাড়ি ছাড়া হলে ২/৩দিনব্যাপী তাদের বাড়িঘরে
Leave a Reply