পাবনা প্রতিনিধি :
প্রচন্ড তাপদাহ বাড়ার সাথে সাথে বেড়েই চলছে পানির চাহিদা। তৃষ্ণা নিবারণের একমাত্র উপায়ই পানি। কিন্ত হস্ত চালিত টিউবওয়েলে পানি না উঠায় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা।
চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরুর দিকে পানি একটু কম উঠলেও বেশ কয়েকদিন সুপেয় পানির সংকট প্রকট হচ্ছে।
ক্রমাগতই নিচের দিকে নামছে এই ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর।
জানা গেছে, পাবনা সদর উপজেলার দক্ষিণ চোকদার পাড়া এলাকায় সাধারণত মাটির নিচে ৪০-৫০ ফুট গভীরে পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে।
দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় এই এলাকায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোও ক্রমেই শূন্য হয়ে পড়ছে। এতে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
মোঃ আলমগীর হোসেন মিন্টু বলেন , গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য টিউবওয়েলই শেষ ভরসা।
ভুক্তভোগী মোঃ মামুন হোসেন বলেন, বাড়ির টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। দুই সপ্তাহ ধরে মোটর চালিয়েও পানি তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
পাশের বাড়ি থেকে পানি এনে দৈনন্দিন কাজ চালানো হচ্ছে।
পানি নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান দাসপাড়া গ্রামের গৃহবধূ মোছাঃ পারভিন খাতুন। একই অবস্থা তাদের আশপাশেও। অথচ তাদের বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে চলছে নদী । ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মোঃ রনি বিশ্বাস বলেন, আগে ২০-২৫ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক পূর্ণ হয়ে যেত। ১৫-২০ দিন ধরে মোটর চালালেও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। এভাবে চলতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে অনেকের বৈদ্যুতিক মোটর।
দাসপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মোঃ শান্ত প্রাং বলেন, আমার বাড়ির আশেপাশে প্রায় ১৫/২০ দিন পানি নেই। শুধু আমার বাড়ি নয়, দাসপাড়া গ্রামের বেশির ভাগ বাড়িতেই একই অবস্থা। খাবার পানির জন্য এখানে হাহাকার শুরু হয়ে গেছে। সকাল ৯টা পর্যন্ত সামান্য পানি পাইলেও দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত একেবারে পানি পাচ্ছি না।
সরেজমিনে গ্রামে দেখা গেছে এলাকার কয়েকজনজন গৃহবধূ ও শিশুরা জগ, কলস ও বালতি নিয়ে লাইন ধরে মোঃ মোসলেম বিশ্বাসের সাবমারসেবল থেকে পানি সংগ্রহ করছেন।
গৃহবধূ কুলসুম খাতুন, লাবনি খাতুন, রাশিদা খাতুন বলেন আমাদের টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। তাই এই থেকে পানি নিতে এসেছি। পানির জন্য এমন কষ্ট জীবনেও পাইনি।
চোকদারপাড়া গ্রামের মোঃ মাসুদ বিশ্বাস বলেন, শুধু হস্তচালিত টিউবওয়েলই নয়, শ্যালো মেশিনেও (গভীর নলকূপ) পানি কম উঠছে। মাঠে আগে যেখানে এক বিঘা জমি ভেজাতে ২ ঘণ্টা লাগতো, এখন সেই জমি ভেজাতে ৬ ঘণ্টা লাগছে। গরম পড়ার পর থেকে এলাকার টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। আমার নিজের টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় পাশের বাড়ির একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করছি। প্রায় ১৫/২০ দিন এভাবে চলছে। যা খুবই কষ্টকর।