সিাদ্দিকুর রহমান বেরোবি প্রতিনিধি:
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে ৩৫ বছরে উন্নীত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এমএ খায়েরের বরাত দিয়ে এ খবরটি নিশ্চিত করেন । এমএ খায়ের বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সম্প্রতি এই চিঠি পাঠিয়েছেন।”
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান বলেন, “সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩৫ করা হলে অনেকে বেসরিকারি খাতের অভিজ্ঞতা নিয়ে সরকারি চাকরিতে আসতে পারবে। এখন যারা একদম ফ্রেশ আসছে, তাদের সেরকম অভিজ্ঞতা থাকে না। সেক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হলে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারবেন তারা।” এটি সরকারি খাতকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করছেন তিনি।
চিঠিতে নওফেল বলেন, “চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ৩৫ বছর করার দাবির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের পাতা নম্বর-৩৩ এর শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে যুক্ত দিতে শিক্ষামন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন চিঠিতে।
“বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়, যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর বিধায় চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যৌক্তিক। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও বাংলাদেশ: বাংলাদেশ বর্তমানে তার অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ বিশেষ ধাপ অতিক্রম করেছে। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের যথাযথ সুফল পাওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হচ্ছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা। ভারত ও চীনসহ উন্নত বিশ্ব এই স্ট্রাটেজিই অনুসরণ করে সফল হয়েছে।”
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রায় আড়াই বছর কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি বা নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী চিঠিতে বলেন, “লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার পর থেকে প্রতি সপ্তাহান্তে ১০-১৫টি বা ততোধিক পরীক্ষা একই দিনে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলস্বরূপ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অজস্র চাকরি প্রত্যাশী। কোভিড-১৯ এর শুরুতে যাদের বয়স ২৭-২৯ বছর ছিল, তাদের বয়স এখন ৩০ বা ততোধিক।
“ফলে চাকরিপ্রার্থীগণ বাস্তবিক অর্থে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ৩০ বছরের পরিবর্তে সাড়ে সাতাশ বছর পেয়েছে। উক্ত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ৩৯ মাসের ব্যাকডেট ধরে একটি বয়স ছাড় প্রদান করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ব্যাকডেট কার্যকর ছিল ১৩ মাস, বাকি ২৬ মাস তা অকার্যকর অবস্থায় ছিল। তাই স্থায়ীভাবে বয়স বৃদ্ধি অতীবও জরুরি।”
বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর বলে উল্লেখ করেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি ভারত ও চীনের উদাহরণ দিয়েছেন।
গবেষণা ও বিশেষ দক্ষতামূলক ক্ষেত্রে বয়সসীমা উন্মুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে নওফেল বলেন, “বিভিন্ন পর্যায়ের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুয়ায়ী সর্বনিম্ন ৩৫ বছর (বিজেএস, ডাক্তার, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর), পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।”
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২ বছর।
উল্লেখ্য যে এই সীমা বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।