নড়াইল প্রতিনিধিঃ
করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প উদ্যোক্তাদের দেওয়া আর্থিক প্রণোদনার ৪ শতাংশ সুদের ঋণ অস্তিত্বহীন ভূয়া কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়ায় নড়াইল কৃষি ব্যাংকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক প্রতাপ কুমার বিশ্বাসকে শাস্তিমূলক বদলি স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
নড়াইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শক্তিপদ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বল্লারটোপ আইডিয়াল কলেজের সহকারি অধ্যাপক তন্দ্রা রায় ‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্ম” ও ‘‘বিশ্বাস ফার্মিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়ারিং” ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ২০ লাখ টাকা লোন নিয়েছেন। ব্যাংক কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার বিশ্বাস ও তার পিসিতো(ফুফাতো) ভাই সরকারি চাকুরীজীবি শক্তিপদ বিশ্বাস যোগসাজস্যে এ দূর্ণীতি করলেও শক্তিপদ বিশ্বাসের শাস্তি না হওয়ায় ক্ষোভ সাধারন মানুষের মধ্যে।
নড়াইল সদর কৃষি ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপক জি এম কামরুল হাসান জানান,‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্মের নামে শক্তিপদ বিশ্বাস ও তার স্ত্রী তন্দ্রা রায় গত ৩০ মে ২০২৩ তারিখে ৪ শতাংশ সুদে ১০ লাখ টাকা ও চলতি বছরের ১৩ মার্চ ‘‘বিশ্বাস ফার্মিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়ারিং” প্রতিষ্ঠানের নারী উদ্যোক্তা তন্দ্রা রায়ের নামে ৫ শতাংশ সুদে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরন করা হয়।
‘‘বিশ্বাস ডেইরী ফার্মের" ঠিকানা সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের রায়খালী গ্রামে শক্তিপদ বিশ্বাসের পৈতৃক নিবাসে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কোন গবাদি পশুর খামার নেই। এ সময় শক্তিপদ বিশ্বাসের পিতা সদানন্দ বিশ্বাস বলেন, তিনি সরকারি প্রাথমিক বিধ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন ২০ বছর আগে অবসরে গিয়ে বৃন্দাবনসহ তীর্থস্থান ঘুরে এসেছেন তার পরিবারে কেউ কখনও গরুর খামার করেননি। শক্তিপদ বিশ্বাসের কাকী রিতা বিশ্বাস বলেন, আমি এ বাড়িতে এসেছি প্রায় ৩০ বছর আগে এ বাড়ির সবাই চাকুরি করে এরা কখনও গরু পালন করেননি।
শক্তিপদ বিশ্বাসের প্রতিবেশী বাবুরাম পাল,তপন কুমার বিশ্বাস, জাহাঙ্গীর মোল্যাসহ প্রতিবেশীরা জানান, আমাদের এ পাড়ায় এখন পর্যন্ত কোন গরুর খামার গড়ে উঠেনি।
‘‘বিশ্বাস ফার্মিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়ারিং” এর ঠিকানা নড়াইল ফেরীঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ফাঁকা ঘরের সামনে ‘‘বিশ্বাস ফার্মিং এন্ড ইজ্ঞিনিয়ারিং” নামে একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। আশেপাশের দোকানদারা জানান, এই ঘরটি খালি পড়ে রয়েছে এখানে কোন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হয় না।
এ বিষয়ে তন্দ্রা রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরুর খামার করার ইচ্ছা ছিল করা হয়নি, দোকান দিয়েছিলাম সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি। তাহলে ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিলেন কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে তার (তন্দ্রা রায়) স্বামী ভালো বলতে পারবেন।
শক্তিপদ বিশ্বাসের সাথে কথা বলতে মোবাইল ফোনে নম্বরে বার বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
লোন সুপারিশকারি কর্মকর্তা মফিজুলের কাছে ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামে কিভাবে লোন সুপারিশ করা হলো জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বলেন এ বিষয়ে আমরা দেখব আপনি দেখার কে?
এ বিষয়ে নড়াইল আঞ্চলিক শাখায় গিয়ে ব্যবস্থাপক প্রতাপ কুমার বিশ্বাসকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে তিনি স্বজনপ্রীতি ও দূনীতি বিষয়টি অস্বীকার করে ফোন কেটে দেন।
এ দিকে এ ঘটনায় গত ২৭ জুন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মোঃ খোরশেদ আনোয়ার স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রতাপ কুমার বিশ্বাসকে বিভাগীয় নিরীক্ষা কার্যালয়,সিলেটে শাস্তিমূলক বদলি স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।