মো: জুলহাস উদ্দিন হিরো, স্টাফ রিপোর্টার।
শেরপুরের একযোগেও গড়ে উঠেনি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রেসক্লাব।
ফলে প্রগতিশীল সাংবাদিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, দীর্ঘ একযোগেরও বেশি সময় ধরে শেরপুর -১ সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক শেরপুর প্রেসক্লাব নিয়ন্ত্রণ করেন ।
তিনি শেরপুরের একজন প্রভাবশালী নেতা। দীর্ঘদিন ধরে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পাশাপাশি একাধারে টানা ৫ বার সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি । যদিও দলীয় কোন্দলের কারণে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ ছিল দুভাগে বিভক্ত।
এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন আতিউর রহমান আতিক। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রোমান ও ছানুয়ার হোসেন ছানু।
এ দুইজন ছিল মতিয়া চৌধুরীর আশির্বাদপুষ্ট।
জোট সরকারের আমলেও আতিউর রহমান আতিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। জানা গেছে, প্রথম দুইবার শেরপুর প্রেসক্লাব নিয়ে তেমন একটা মাথা ব্যথা ছিল না তার।
কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি প্রেসক্লাব নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। তিনি নিজে সাপ্তাহিক কালেরডাক নামে একটি পত্রিকার প্রকাশ হন।
হন শেরপুর প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য। আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় বার তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ নির্বাচিত হন।
দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভক্তি থাকলেও দুইবার জাতীয় সংসদের হুইপ থাকাকালীন সময়ে তিনি তার অনুগতদের দিয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি / সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন।তারাই প্রেসক্লাব নিয়ন্ত্রন করেছেন দীর্ঘদিন থেকে।
এ সময়ের মধ্যে আতিউর রহমান আতিক শেরপুর প্রেসক্লাবকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রন করেছেন। তার দিক নির্দেশনায় তার অনুগত হয়ে স্থানীয় সকল সাংবাদিকরা কাজ করেছেন।
কোন সাংবাদিক তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করেনি। এভাবে গত ১৫ বছর ধরে চলে প্রেসক্লাবের কার্যক্রম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একমাস পুর্বে হুইপ আতিকের হস্তক্ষেপে এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধারকে সভাপতি ও আদিল মাহমুদ উজ্জ্বলকে সাধারন সম্পাদক করে প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আতিউর রহমান আতিককে পরাজিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু সংসদ সদস্য নির্বাচিত নির্বাচিত হন।
তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আতিউর রহমান আতিকের রাজনৈতিক অবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছুই পরিবর্তন ঘটে।
এক মাসের মধ্যে সংসদ সদস্য ছানুয়ার হোসেন ছানু জেলা ও উপজেলার সাংবাদিকদের ডাল ভাতের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে খাতায় স্বাক্ষর নেয়।
তিনি তার অনুগত দেবাশীষ ভট্টাচার্যকে সভাপতি ও বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী মেরাজ উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন করে প্রেসক্লাবের আরোও একটি কমিটি গঠন করেন।
পরে এ কমিটির বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নেন পুর্বের কমিটি। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।
পরবর্তীতে ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে বিএনপি মনাদের একটি অংশ কাকন রেজাকে সভাপতি ও মাসুদ হাসান বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন আরো একটি গঠন করা হয়।
কিন্তু এ কমিটিরও বাঁধ সাজে শেরপুর জেলা বিএনপি। জানা গেছে, জেলা বিএনপির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই কমিটিকে বাতিল করেন।
এ নিয়ে জেলার সাংবাদিকদের মধ্যে চলছে নানা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। অপরদিকে এ কমিটিতে বেশিরভাগ সাংবাদিক যাদের স্থান হয়নি তারা নতুন করে আরো একটি কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া ওরে আসছেন।
উল্লেখ্য রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দীর্ঘ একযোগের ও বেশি সময় ধরে শেরপুরে গড়ে ওঠেনি একটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত- নিরপেক্ষ ও স্বাধীন প্রেসক্লাব