মো: জুলহাস উদ্দিন হিরো, স্টাফ রিপোর্টার।
শেরপুরে এক কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একটি এমপিওভুক্ত কলেজে চাকরি করেও অন্য একটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন বলেও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মো. শাহিনুর ইসলাম। তিনি ঝিনাইগাতি মহিলা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের গ্রন্থাগার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত আছেন।
জানা গেছে, তিনি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, পাঠদানের স্বীকৃতি এবং এমপিওভুক্তিকরণ ও কলেজের ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রায় ৬০/৬৫ লক্ষ্য টাকা প্রতারনা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ২০১৪ ইং সাল হতে ২০২৪ ইং সনের মধ্যে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট থেকে টিউশন ফির টাকা উত্তোলন করে। যার পরিমাণ,, ৪ লক্ষ্য ৭২ হাজার ৫শত টাকা।
স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলনের দায়ে উক্ত কলেজের সভাপতি বাদী হয়ে, তার নামে বিজ্ঞ, সি, আর আমলে আদালত ঝিনাইগাতী, শেরপুর একটি মামলা করে। ঝিনাইগাতী সি আর মো: নং ২৪৬/ ২০২৪
মোকদ্দমা, ৪৬৭/৪৬৮/৪০৬/৪৭১/৪২০ দন্ড বি:
অপরদিকে জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ভারুয়া সীমান্ত মডেল কলেজে তিনি দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময় তিনি শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন দুর্নীতির চিত্র উঠে আসায় তিনি গত ১১/৪/২০২২ইং সনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে স্ব ইচ্ছায় পদত্যাগ করেন।
তবে ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের দুদিন পরেই, তিনি তার লোকজন নিয়ে ৭ই আগস্ট কলেজের তালা ভেঙ্গে প্রবেশ করে রক্ষিত স্টীলের আলমারীর তালা ভেঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কলেজ পরিচালনার রেজুলেশন খাতা ও ২৬ জন শিক্ষক কর্মচারীদের যোগদান পত্র, ছাত্র- ছাত্রীর মার্কসীটও সার্টিফিকেট সহ নগদ ৫০,০০০ হাজার টাকা লুট করে। এবিষয়ে উক্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বাদী হয়ে (৪) জনকে আসামী করে বিজ্ঞ সি, আর আমলী আদালত ঝিনাইগাতী,শেরপুর। একটি মামলা দায়ের করেন। উল্লেখ্য আসামী হলেন (১) সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: শাহিনুর ইসলাম (৪৮) (২) মো: খবির উদ্দিন(৩৫) (৩) মো: আপেল মাহমুদ(৩০) (৪) মো: শরিফুল ইসলাম (২৮) এছাড়াও অজ্ঞাত আরও ১৫/২০ জনকে আসামী করা হয়। সি,আর মো: নং- ২৪৫/ মো: দঃ বিঃ ১৪৩/১৪৯/৪৪৮/৪৫০/৪৬১/৩৮০/৪২৭/৫০৬/(২) ধারা।
শিক্ষকরা বলেন, চেয়ারে বসেই শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে আসছেন শাহিনুর ফলে শিক্ষকদের অনেকে কলেজে আসছেন না। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সাথে কথা হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় অন্য একটি কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়েও সীমান্ত মডেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে যোগদান করেন শাহিনুর ইসলাম। এরপর কখনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, কখনো পাঠদানের স্বীকৃতি। আবার কখনো এমপিওভুক্তিকরণ বা কলেজের ভবন তৈরির কথা বলে শুরু করেন শিক্ষক কর্মচারীর কাছ থেকে টাকা গ্রহণ। দীর্ঘ কয়েক বছর পরেও প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়া এবং ম্যানেজিং কমিটিসহ অন্যান্য শিক্ষকদের খরচের হিসাব না দেওয়ায় সন্দেহ শুরু হয়। পরে ২০২২ সালের ২০ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ১৯ শিক্ষক-কর্মচারী বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণের আবেদন করেন। সে সময় ১৯ জন শিক্ষক ও কর্মচারীর মধ্যে ১৬ জনই সেখানে স্বাক্ষর করেন।
পরে অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের হিসাব দিতে না পেরে স্ব ইচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যান শাহিনুর। তবে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর নিজেকে বিএনপির লোক দাবি করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেন তিনি। ৭ আগস্ট সকালে একদল লোকজন সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির তালা ভেঙে প্রবেশ করে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসেন তিনি। এরপর থেকেই বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে কলেজে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না।
প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মো. মুক্তার হোসেন বলেন, আমি প্রধান সহকারী হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের কোনো কাগজপত্র ধরতে দেয়নি সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। ভর্তি, ফরম ফিলাপ ও রেজিস্ট্রেশন সব নিজেই করতেন। এমপিও ও স্বীকৃতির জন্য কয়েক ধাপে আমিও তাকে টাকা দিয়েছি। পরে টাকা ফেরত দেয়নি।
জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. শাহজালাল বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই আমি এই কলেজে শিক্ষকতা করছি। কলেজ প্রথমে ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু এমপিওর জন্য অন্যান্য শিক্ষকের মতো আমার কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। এখন আবার জোর করে প্রতিষ্ঠানে ঢুকে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। মারার হুমকি দিচ্ছে। প্রাণভয়ে কলেজে যাচ্ছি না।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, দুর্নীতির দায় নিয়ে ২০২২ সালে তিনি পদত্যাগ করে চলে যান। এরপর থেকে আমি দায়িত্ব পালন করে আসছি। গত ৭ আগস্ট তিনি তালা ভেঙে কলেজে প্রবেশ করেন। এরপর থেকে আমাকে আর কলেজে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। আমি এর ন্যায় বিচার দাবি করছি।
এ বিষয়ে এমপিওভুক্ত ঝিনাইগাতি মহিলা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার জানামতে একইসঙ্গে দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে সে বেতন নিতে পারবে না। কিন্তু কাজ করতে পারবে বলে আমি জানি। যদি এ বিষয় নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা তৈরি হয় তাহলে তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে কোথায় কাজ করবে।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমি এই এলাকার হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে আলো ছড়ানোর জন্য আমার পেনশনের টাকায় কেনা জমিতে কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। তৎকালীন গ্রামের মানুষসহ আমরা তাকে প্রতিষ্ঠান দেখভাল করার দায়িত্ব দিই। কিন্তু কে জানত সে এতো দুর্নীতিগ্রস্ত লোক। দায়িত্ব নিয়েই সে নানা ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে একটি অভিযোগ পেয়েছি। সেই অভিযোগটি তদন্ত করে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ছাড়াও নীতিমালা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করা যাবে কিনা তা খতিয়ে দেখবো।