রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাটঃ
লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে বোমা মেশিন মালিকদের কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। মাটির নীচ থেকে অবৈধ পন্থায় পাথর উত্তোলন করতে পারলেই টাকার পাহাড় গড়ার স্বপ্ন। পাটগ্রামে বিভিন্ন স্থানে বোমা মেশিনে সয়লাব হয়ে গেছে। ওখানকার মানুষের সকালের ঘুম ভাঙ্গে বোমা মেশিনের শব্দে। খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মাটির গভীর থেকে মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা যাবে না। কিন্তু এ নির্দেশ কেউ মানছে না। স্থানীয় প্রশাসন দাবী, তারা প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেশিন ভাংছে। কিন্তু তারপরও দেধারছে চলছে বোমামেশিন। কেন চলছে, কিভাবে চলছে এর সৎ উত্তর কারো কাছে নেই।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসন হাতুড় বাটাল দিয়ে মেশিনের ওপরের আংশিক কিছু অংশ ভেঙ্গে দিচ্ছে এবং জরিমানা করছে। কিন্তু মেশিন মালিকরা সামান্য কিছু টাকা খরচ করে ওই মেশিন মেরামত করে আবার সচল করছে। পাটগ্রাম উপজেলায় একটি পৌর সভাসহ আটটি ইউনিয়ন রয়েছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌর সভায় চলছে বোমা মেশিন মহোৎসব। নেই কোথাও বাধা। ধরলা, সানিয়াজান ও তিস্তা নদীতে, কোথাও বা পুকুরে আবার আবাদি জমিতে এমনকি শুকনো স্থানেও জলাশয় সৃষ্টি করে মাটির গভীর থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা পাথর উত্তোলন করছে তারা এলাকায় অত্যান্ত প্রভাবশালী। কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সাথে তাদের সম্পৃক্ততা থাকায় তারা অপ্রতিরোধ্য ভাবে মেশিন দিয়ে মাটির গভীরে থেকে পাথর তুলছে। প্রতি রাতে প্রায় শতাধিক বোমা মেশিন চলছে। থ্রি এবং সিক্স সিলিন্ডারের এসব মেশিন দিয়ে স্থান ভেদে দশ থেকে বার ট্রলি (একশ সিএফটিতে এক ট্রলি) পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
সূত্র জানায়, শক্তিশালী এসব মেশিনের ডেলিভারী পাইপের মুখে রাবারের তৈরী হোস পাইপ এবং ভারী ওজনের লোহা লাগিয়ে মাটির ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীর থেকে পাথর এবং বালু তুলে নিয়ে আসা হচ্ছে। পাথর তোলার কাজে যেসব শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন তার মূল দায়িত্বে থাকেন একজন লেয়ারম্যান। তার সহযোগী হিসেবে আরও তিনচারজন শ্রমিক থাকে। তারা প্রতিরাতে নির্দিষ্ট চুক্তি ভিত্তিক এই অবৈধ কাজটি করেন। যে স্থান থেকে পাথর বালু তোলা হয় ওই স্থান বিরাট গর্ত এবং জলাশয়ের সৃষ্টি হওয়ায় আশে পাশের আবাদী জমি ভাঙন এবং বালু পড়ে অনাবাদী হয়ে পড়ছে।
জগতবেড় ইউনিয়নের বাংলাবাড়ি গ্রামের হোসেন আলী অভিযোগ করেন, ধরলা নদীতে তার জমির পাশে বোমা মেশিন বসিয়ে রাতের আধারে পাথর তুলে নিয়ে যাচ্ছে বোমা মেশিন মালিকরা। এতে তার আবাদী জমি ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। তিনি আশংকা করছেন দ্রুত ওই মেশিন বন্ধ করা না হলে তার জমি বিলীন হয়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন জানিয়ে তিনি পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন। হোসেন আলী আরও জানান, বোমা মেশিন দিয়ে শুধু পাথর বালু তোলা হচ্ছে তাই নয় এই মেশিনের বিকট শব্দে এলাকার শিশু বৃদ্ধ সহ পরিবারের কেউ রাতে ঘুমাতে পারেনা।
হাতীবান্ধা আলীমুদ্দিন সরকারী ডিগ্রি কলেজের ভুগোল ও পরিবেশ বিষয়ের প্রভাষক আসাদুজ্জামান প্রামানিক বলেন, এ ব্যপারে এলাকার সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। কারন মাটির নীচ থেকে এভাবে পাথর তোলায় তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তার মতে সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে এলাকার গাছপালা বাড়িঘর এমনকি মাটি ধ্বসে গিয়ে ব্যপক ক্ষতি হতে পারে।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে মেশিন মালিকদের সুনির্দিষ্ট নাম ঠিকানা পাওয়া গেলে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে যাতে আইনের আওতায় আনা যায় আমরা সে ব্যপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি।