মো: জুলহাস উদ্দিন হিরো, স্টাফ রিপোর্টার।
ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয় জেলার ২২ টি ইউনিয়ন। গত কয়েকদিনে কিছু কিছু এলাকার পানি কমতে শুরু করায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো পানি বন্দী রয়েছে নিম্ন অঞ্চলের অনেক পরিবার। কিছু কিছু এলাকায় এখনো পৌছায়নি ত্রান সামগ্রী। ফলে ওইসব এলাকায় খাদ্য সংকটে চলছে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১১
জানা যায় বন্যায় কৃষিতে অত্যন্ত ৫শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং মৎস্য খাতে আনুমানিক ক্ষতির ধারণা করা হচ্ছে শতকোটি টাকার। কৃষি ও মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে বন্যায় জেলার ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এছাড়াও ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং মাছের ঘের চলে গেছে ৬৭১ টি এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরকারী হিসাবে প্রায় ৭১ কোটি টাকা হলেও তা শতকোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।এতে সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার প্রায় পৌনে দুই লাখ কৃষক। পাহাড়ি ঢলের পানি কমে যাওয়ায় দূর্যোগপূর্ণ এলাকাগুলোর করুণ চিত্রগুলো ফুটে উঠেছে।
দেখা যায়, পানি কমলেও বন্যা দূর্গত এলাকায় বেড়েছে দূর্ভোগ।ভেঙ্গেছে রাস্তা কালভার্ট ব্রীজ। যার ফলে ওইসব এলাকায় এখনো পৌছায়নি কোনো ত্রাণ সামগ্রী। এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানির সংকটে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
গৃহপালিত পশু গরু,মহিষ সহ গবাদি পশু হাঁস মুরগী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব মানুষ। ফসলের মাঠ তলিয়ে যাওয়ার কারণে দেখা দিয়েছে ঘাসের অভাব। এছাড়াও বাড়ি ঘরে পানি উঠায় নষ্ট হয়েছে খড়ের গাধা। একদিকে খাদ্য সংকট অন্যদিকে মাথার উপর চাল না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পানি বন্দী হাজারো মানুষ।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নকিবুজ্জামান জানান, গত দুইদিনে পাহাড়ি নদী ভোগাই,চেল্লাখালী ও মহারশির পানি বিপদ সীমা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার বন্যার পানি অনেকটাই কমে গেছে। নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলারসহ সদর উপজেলা প্লাবিত এলাকা থেকেও পানি ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। এতে দু- একদিনের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতে পারে।
জেলা খামার বাড়ির উপপরিচালক ড,সুকান্ত দাস বলেন, অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি আমন আবাদের সারে ৯৩ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার হেক্টর জমি। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা ক্ষতির পরিমাণ ৫শ কোটি টাকা। বন্যার পানি নেমে গেলে সঠিক পরিমাণ নিরুপন সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার,বীজ,দেওয়া হবে। এছাড়াও কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে জানানো হবে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড,এবি এম,আব্দুর রউফ বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার ৪৩ হাজর গরু, ৪৬০ টি মহিষ, ৭১ হাজার ছাগল ও ভেড়া, ৫ লক্ষ ৮ হাজার মুরগী, ১৮ হাজার হাঁস ক্ষতির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে ৬৬ জন খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
দূর্গত এলাকাগুলোতে অনেক প্রাণী খাদ্য সংকটে পড়েছে এবং নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এজন্য প্রাণী সম্পদ বিভাগের তরফ থেকে নিয়মিত কৃষকদের সা যোগাযোগ রক্ষা করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামারিদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়াও খাদ্য নিরসনে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ৩ টণ গো- খাদ্য বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, জেলায় বন্যা দূর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের মাঝে বিতরণের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় টিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হবে।