নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের তালা ভেঙ্গে ৪টি সিলিং ফ্যান চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১১ অক্টোবর সন্ধ্যার পর এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী আঃ মান্নান বলেন, আমি স্কুলের নতুন ভবনের লাইট জ্বালাতে গিয়ে দেখি একটি কক্ষের তালা ভাঙ্গা এবং ৪টি সিলিং ফ্যান নেই। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল স্যারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে মোবাইল বন্ধ পাই। পরে সিনিয়র শিক্ষক গোলাপী রানী বিশ্বাস ও অন্যান্য স্যারদেরকে বিষয়টি জানাই। ভবনের পিছনে খোঁজাখুঁজির পর ফ্যানগুলোর বিভিন্ন অংশ পাওয়া যায়।
নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক অভিবাবক সদস্য আবু সুফিয়ান বলেন, আমি স্কুলের ফ্যান চুরি হয়েছে শুনতে পেয়ে রাতেই স্কুলে যাই। নৈশ প্রহরী জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের মোবাইল বন্ধ। তিনি ভারতে গেছেন, স্কুলের দ্বায়িত্বে কে আছেন তিনি (মান্নান) জানেন না। সিনিয়র শিক্ষক গোলাপী রানী বিশ্বাস ও অন্যান্য স্যারদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ইতোপূর্বে স্কুলের টিউবওয়েল চুরি হয়েছিল। শুনেছি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের পরিবার ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কয়েকমাস পর পর তিনি সেখানে যান। রহস্যজনক বিষয় হলো তিনি মেডিকেল ছুটি নিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে যান এবং গত জুলাই মাসে যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ১৯ দিন ভারতে কাটিয়েছেন। গত ১৫ মাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব নিয়ে সুমন কুমার মন্ডল অনিয়ম ও দূর্নীতিতে স্কুলটি ধ্বংস করে ফেলেছেন।
আবু সুফিয়ান আরো বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্তে আত্মস্বীকৃত দূর্নীতিবাজ সুমন কুমার মন্ডলকে প্রধান শিক্ষক পদে অযোগ্য ঘোষণা করলেও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব গোলাপী রানী বিশ্বাস জেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদন অমান্য করে সুমন কুমার মন্ডলকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার অংশগ্রহনের জন্য প্রবেশপত্র সরবরাহ করেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দূর্নীতিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাপী রানী বিশ্বাসের যোগসাজস থাকতে পারে বলে তদন্তের দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষক-কর্মচারিরা জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রায়ই ছুটি নিয়ে কোথায় যান তারাও জানেন না। শুধুমাত্র সিনিয়র শিক্ষক গোলাপী রানী বিশ্বাসকে মৌখিক ভাবে জানিয়ে যান। সিনিয়র শিক্ষক গোলাপী রানী বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ছুটির বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।
এ বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলকে ফোন করলে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল ভারতে গিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুলাই মাসে ভারতে যাওয়ার আগে আমাকে মৌখিক ভাবে বলে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি আবারো ভারতে গিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি, তবে আমাকে কিছু বলে যাননি বা স্টেশন লিভ করার বিষয়ে কোন প্রকার অনুমতি নেননি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা অফিসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানিয়েছেন।
ভিসি উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট লিংকন বিশ্বাস বলেন, বিদ্যালয়ের ফ্যান চুরির বিষয়টি জানতে পেরে জিডি করতে বলেছিলাম। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ফ্যানগুলো খুলেছিল নিতে পারেনি, তাই জিডি করার প্রয়োজন নেই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল স্টেশন লিভ করে ভারতে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুঁজোর ছুটির বিষয়ে বলেছেন। ভারতে চিকিৎার জন্য হয়তো যেতে পারেন, আমাকে কিছু বলেননি, ডিপার্টমেন্টকে (ডিইও) বলে গেছেন কিনা জানিনা।