মোহাম্মদ মাসুদ
দেশের ১২ সিটির মধ্যে প্রথম ব্যতিক্রমী নজিরবিহীন যুগান্তকারী আদালতের রায়ে ইতিহাস গড়ে চসিক মেয়র হলেন ডা. সাহাদাত হোসেন। আবারো শীর্ষ আলোচিত হলো চসিক নতুন মেয়র পদের। দেশজুড়ে রাজনীতিক মহলে সাধারণ জনতার মাঝে পেশাজীবী সর্বস্তরের জনমনে জল্পনা কল্পনার হল অবসান। ফ্যাসিসবাদী সরকারবিরোধীদের ছাত্র-জনতা সাধারণ জনগণ ও জনমনে সকলের কাছে হলেন ইতিবাচক আলোচিত ও প্রশংসিত। ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ভালোবাসায় সিক্ত। চোসিক ব্যতিক্রমী নতুন মেয়র ইতিহাসে রেকর্ডে স্মরণকালের স্মরণীয় হয়ে থাকবে । যা ব্যাপক শীর্ষ শিরোনামে প্রকাশিত হয় গনমাধ্যম প্রিন্ট পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা ব্যাপক আলোচিত হয় সকল মানুষের মুখে মুখে। তবে, বিগত সরকার সমর্থক ও সমমনা রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মাঠে ময়দানে নেই কোন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সরব কোন সক্রিয়তা। তবে সমালোচিত হয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
" চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। এটা অস্বীকার করার জোঁ নেই।" নতুন মেয়র হয়েই বললেন দেশজুড়ে চট্টগ্রামের অবদানের কথা। চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে চট্টগ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নতুন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম ভৌগোলিকভাবে এমন একটি জায়গায় রয়েছে। যেখানে পাহাড়, সমুদ্র, পর্যটন, স্পেশাল ইকোনমিক জোন থেকে শুরু করে প্রতিটিতে এই চট্টগ্রাম নগরের ওপর দিয়ে যেত হয়।
রবিবার (৩ নভেম্বর) সকাল পৌনে ১১টার দিকে সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে শপথ পাঠ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
শীর্ষ আলোচিত নতুন মেয়র পদের আইনি জটিলাতা জল্পনা কল্পনা গুঞ্জন অবসান ঘটিয়ে অপসারিত মেয়র এর পদে নতুন মেয়ের হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।। ১২ সিটির মধ্যে প্রথম নতুন মেয়রের হতে যাচ্ছে শপথ আজ। চসিকের নতুন মেয়র ডা.শাহাদাত হোসেন আগামীকাল শপথ নেবেন। যুগান্তকারী রায়ে মেয়র হওয়ার আনন্দে আবেগে অনুভূতিতে দলীয় নেতাকর্মী নগরবাসীর উচ্ছ্বাস উল্লাস। আজ মেয়র পদে শপথে আবারোও শীর্ষ আলোচিত হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও দেশজুড়ে।
চোসিক মেয়র বলেন, চসিকের মেয়র হিসেবে আমার দায়িত্ব আছে। তাই আমি মনে করি, এখানে যারা সেবা প্রদানকারী সংস্থা আছে সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পুলিশ কমিশনারসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে চট্টগ্রামকে একটি ‘প্লেয়িং সিটি’ করার চেষ্টা করবো। সেক্ষেত্রে সবার সহগযোগিতা কামনা করছি। কারণ এটা একটা সিস্টেমের ব্যাপার।’
তিনি আরো বলেন, ‘চট্টগ্রাম এমন একটি জায়গায় আছে; যেখানে দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সবার প্রথমেই কক্সবাজারের কথা আসে। এরপর চিন্তা করেন বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি; এসব জায়গায় চট্টগ্রাম শহরের ওপর দিয়ে যেতে হবে। এই শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে তাহলে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি কাজে দিবে। প্রধান উপদেষ্টা এদিকে নজর দেবেন।’
‘নগরের অনেক রাস্তাঘাটের অবস্থা বেশামাল অবস্থায় রয়েছে।’ দায়িত্ব নিয়ে রাস্তাঘাটের সমস্যা দ্রুতই ঠিক করা হবে বলে জানান ডা. শাহাদাত হোসেন।
নগরের প্রথম সমস্যা জলাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে চসিকের নতুন মেয়র বলেন, ‘জলাবদ্ধতার প্রকল্প যেটি চসিকের মাধ্যমে হওয়ার কথা ছিল; সেটি ২০১৬ থেকে সিডিএর মাধ্যমে হচ্ছে। ১১ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দের এ প্রকল্প ২০২৬ সালে শেষ হবে। তখনই জলাবদ্ধতার একটি রেজাল্ট পাব। আর নগর সরকার এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করলে সেবা ও উন্নয়ন আরও পরিকল্পিতভাবে হবে।’
বিভিন্ন করপোরেশনের কথা তুলে ধরে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘অন্যান্য করপোরেশনের চেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নাগরিক বেশি। এখানে প্রায় ৭০ লাখ নাগরিক রয়েছেন। এটা একটা বড় শহর। এ শহরটা আমার একার নয়; এটা আমাদের। এটা মাথায় রেখে যদি সবাই কাজ করি তাহলে চট্টগ্রাম শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে গর্ব করে বলতে পারবে। ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি, হেলদি সিটি’ —এটা আমার নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল। এ ইশতেহার পূরণ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
চসিক মেয়র বলেন, ‘আমরা দেখেছি বাংলাদেশের জিডিপিতে গার্মেন্টস খাত, মানবসম্পদ, কৃষিখাত; শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে এসেছিল। আর এ তিনটি খাত এখনো পর্যন্ত জিডিপিতে অবদান রাখতে পারলেও চতুর্থ আরেকটি খাত জিডিপিতে অবদান রাখতে পারছে না; সেটি হলো পর্যটন খাত। যেই পর্যটন শিল্পকে ব্যবহার করে সার্কভুক্ত দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের কথা বলে এ খাতকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এই খাতটিকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেনি।
মেয়রের একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সচিবালয় থেকে এখন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতে যাবেন চসিক মেয়র। এতে চট্টগ্রাম থেকে আগত নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে উপদেষ্টা হাসান আরিফ বলেন, ‘ডা. শাহাদাত হোসেন বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশের একটি প্রধান নগরীর মেয়র হয়েছেন। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের শিক্ষাকে বুকে ধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবেন, এটাই তার কাছে প্রত্যাশা করি। আমরা গ্রিন চট্টগ্রাম দেখতে চাই। জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম দেখতে চাই। ক্লিন সিটি হিসেবে নগরবাসীরও একই প্রত্যাশা।’
এর আগে এদিন সকালে মেয়র হিসেবে শপথ নেন ডা. শাহাদাত হোসেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তাকে শপথ পাঠ করান।
এ সময় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমসহ আরও অনেকে।
উল্লেখ্য: এর আগে, ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চসিক নির্বাচনে কারচুপি ও ফল বাতিল চেয়ে মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচন কমিশনারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন রেজাউল করিম চৌধুরীর ফলাফল বাতিল করে ডা. শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেন। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশ দেন।