নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইলের জমিদার কতৃক ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের আত্মস্বীকৃত দূর্ণীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের অনিয়ম ও দূনীতির কারনে স্কুলটি ধংসের দ্বারপ্রান্তের অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে আত্মস্বীকৃত দূর্নীতিবাজ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমারের অপসারন ও তার দুর্ণীতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, ইতিপূর্বে সুমন কুমার মন্ডল ছাত্রদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, অত্র বিদ্যালয়ের বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এস সি প্রোগ্রামের বোর্ড পরীক্ষায় কেন্দ্রে নকলে সহায়তা,(মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছাত্রদের নকল সরবরাহ ও ছাত্রের পরীক্ষার খাতা নিজে দেওয়ার সময় সাংবাদিকের হাতেনাতে ধরা পড়ে পা জড়িয়ে ধরে মাফ চেয়ে পার পায়। বিশেষ করে অংক ইংরেজী পরীক্ষার খাতা লিখতে খাতা প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন। এসব কাজে বিদ্যালয়ের তার পছন্দের শিক্ষককে নিয়ে গোপন পরীক্ষার হলে চলত এসব অবৈধ কর্মকান্ড), কৃষিশিক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষায় ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা আদায়, ব্লাকমেইল করে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ নানা দুর্র্নীতির জন্য শেষ বারের মতো ক্ষমা চেয়ে আত্মস্বীকৃত দূর্নীতির মুচলেকা দেন। ফলে ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি ও নড়াইল পৌরসভার মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর বিশ্বাস তাকে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনের অযোগ্য ঘোষনা করেন।
পূনরায় গত ৩১/০৭/২৩ ইং তারিখে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে গত ০১/০৮/২৩ তারিখে সুমন কুমার মন্ডল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে গত ০২/১০/২৩ ইং তারিখের সাজানো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে দূর্নীতির মুচলেকাসহ নেতিবাচক মন্তব্য ছড়িয়ে পড়লে জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে বিগত ০৮/১০/২৩ ইং তারিখের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষক পদে তাকে অযোগ্য ঘোষনা করে বাকী বৈধ ১১জন প্রার্থীকে নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেন। কিন্ত অদৃশ্য শক্তির বলে তদন্ত প্রতিবেদন অফিসে সংরক্ষন না করে গায়েব করে দেন ।
এ ছাড়া কমিটি গঠনের নীতিমালার ৬৩(৩) ধারা অমান্য করে সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার (ডিও লেটার না নিয়ে) নাম ভাঙ্গিয়ে ব্লাক মেইল করেছেন। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অতি গোপনে অসৎ উদ্দেশ্যে বর্তমান কমিটির টানা ১৪ বছরের বিদ্যুৎসাহী সদস্য নিপু সরকারকে দাতা সদস্য বানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের তদন্ত চলমান থাকায় নিপু সরকারের দাতা সদস্য বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। সুমন কুমার মন্ডলের পরিবার ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে অবৈধভাবে ২/৩ মাস পরপর ভারতে যান। গত (১২-৩০) জুলাই ,(৯-১৯) অক্টোবর যথাযথ কতৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে ভারতে গিয়েছেন। দূর্ণীতি করতে অফিস সহকারীকে স্কুলের ক্যাশ বইয়ের পাতা ছিড়ে ফেলতে নির্দেশ দেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের শূন্য ৪টি পদে এনটিআরসিতে আবেদন না করাসহ নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ করা হয়েছে।
বিগত কমিটির অভিবাবক সদস্য আবু সুফিয়ান বলেন, ভিসি স্কুলে নিয়ম নীতি কিছু আছে বলে আমার জানা নেই। অধিকাংশ রেজুলেশান মিটিং ছাড়াই হতো এ কারনে আমি অনেক রেজুলেশানে স্বাক্ষর করিনি।এ বিষয়ে কথা বলার পরিবেশ না থাকায় কমিটির সদস্য কেউ কথা বলতে পারিনি। গত বছরের ০২ আগষ্ট প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে তদন্তে দূর্ণীতিবাজ সুমন কুমার মন্ডলের দূর্নীতির সত্যতা পাওয়ায় তাকে প্রধান শিক্ষক পদে অযোগ্য ঘোষনা করা হলেও বিষয়টি গোপন করা হয়।
পূনরায় এ বছরের ৪ জানুয়ারী সুমন কুমার মন্ডলকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয় আমরা কেউ জানতাম না। ইসলাম ধর্মের শিক্ষক বিজ্ঞান গ্রুপের না হওয়ায় তিনি বিজ্ঞান ক্লাস নিতে অপরাগতা জানালেও স্বৈরাচারিভাবে তাকে জোর করে ৮ম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাস চাপিয়ে দিয়েছেন।শুনেছি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল দ্বৈত নাগরিক তার পরিবার ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
কয়েকমাস পর পর তিনি সেখানে যান। তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে মেডিকেল ছুটি নিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে যান।গত ১৫ মাস ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দ্বায়িত্ব নিয়ে সুমন কুমার মন্ডল অনিয়ম ও দূর্নীতিতে স্কুলটি ধ্বংস করে ফেলেছেন।
আত্মস্বীকৃত দূর্ণীতির মুচলেকায় স্বাক্ষরকারী সিনিয়র শিক্ষক সামিনা পারভীন, মোঃ আলমগীর হোসেন ,অমরেশ কুমার শ্বিাস বলেন, সুমন কুমার মন্ডলের দূর্ণীতির মুচলেকার বিষয়টি সত্য আমরা এর আগে একাধিক তদন্তে বিষয়টি সত্য বলেই জানিয়েছি।
গত কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি সালেহ পারভীন জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল কোন মিটিং ছাড়াই গোপনে নিপু সরকারকে দাতা সদস্য নিয়েছিলেন।এ ছাড়া এখনও তিনি প্রতিনিয়ত গোপনে নানা ধরনের অনিয়ম ও দূর্ণীতি করে যাচ্ছেন।
অফিস সহকারি গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমাকে স্কুলের ক্যাশ বইয়ের পাতা ছিড়ে ফেলতে বলেন,আমি ক্যাশ বইয়ের পাতা না ছিড়ে কমিটিসহ সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দিলে অসীম কাপুড়িয়া আমাকে ফোন করে হুমকি প্রদান করেন।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সবুজ বলেন, ২০১২ সালে আমি সাজ্জাদসহ কয়েকজন স্কুলে অনুপস্থিত থাকায় উপবৃত্তির টাকা দেয়নি।পরে জানতে পারি সুমন স্যার অন্য ছাত্রকে দিয়ে আমার উপবৃত্তির টাকা তুলে নিয়েছেন।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র নড়াইল গ্রামের বিপ্লব বলেন,আমি ভিসি স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র (এস.এস.সি ৯১ ব্যাচ)। আমার পিতা শহিদুল হক অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। তাই নড়াইল ভিসি স্কুলের প্রতি রয়েছে আমার আলাদা অনুভূতি, ভালোলাগা-ভালবাসা ও দায়বদ্ধতা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারনে তার শাস্তি ও অপসারন চেয়ে বিগত ১০ মার্চ তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি ও এ বিষয়ে কয়েকবার আমি শুনানিতে হাজির হয়েছি। আবেদন তুলে নিতে অসীম কাপুড়িয়াসহ নানা প্রান্ত থেকে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়।স্কুলটিকে বাচাতে দ্রুত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের অপসারন দাবি করছি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডল মুচলেকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন সেটা অনেক আগের ঘটনা সেটা সেসময় শেষ হয়ে গেছে। গোপনে দাতা সদস্য নেওয়া আমার ভুল হয়েছে। শূন্যপদে শিক্ষকের আবেদনের টাকা জমা দিতে ভুল হওয়ায় আবেদন বাতিল হয়েছে। বিদেশে যাওয়ার অনুমতি নেয়নি, এ বিষয়ে আমার উর্ধতন কতৃপক্ষ দেখবে। ক্যাশ বইয়ের পাতা ছিড়ে ফেলতে নির্দেশ দেওয়ার বিষয় অস্বীকার করেন। কমিটি গঠনে সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার ডিও লেটার আমি নেয়নি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার বাবার অনুমতি নিয়েছিলাম।
এ সব বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের জানতে চাইলে তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুমন কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।