আব্দুল মজিদ মল্লিক, জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ:
বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুনকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটক করে নওগাঁ পুলিশে দিয়েছেন, রোববার সকালে বগুড়া থেকে তাকে আটক করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তার আগে শনিবার মামুনুর রশিদ মামুনের স্ত্রী, ভাগনি জামাই এবং বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন এর প্রধান নির্বাহী (এমডি) নাজিম উদ্দিন তনুর বোন সুফাকে আটক করে পুলিশ। নাজিম উদ্দিন তনু নওগাঁ শহরের জগৎসিংহপুর মহল্লার বাসীন্দা। মামুনুর রশিদ মামুন আটকের খবর জানার পর প্রায় দুইশ ভুক্তভোগীরা দুপুরে সদর থানায় গিয়ে ভীড় করে গ্রাহকেরা। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠান।
জানা যায়- নওগাঁ শহরের খাঁস-নওগাঁ পোষ্ট অফিস পাড়া গত কয়েক বছর থেকে বেসরকারি সংস্থা বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন ঋনদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। এছাড়া জামানতকারীদের লাখে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা মুনাফা(লাভ) দিতেন। জেলার ১১ টি উপজেলায় এ সংস্থার শাখা রয়েছে। উচ্চ মুনাফার ফাঁদে পড়ে গ্রামের সহজ-সরল শত শত মানুষ কোটি কোটি টাকা আমানত রাখে। এ সংস্থার সদস্য প্রায় সাড়ে ৫ হাজার।
গত দুই মাস থেকে গ্রাহকদের মুনাফা দেয়া বন্ধ করে দেই ওই সংস্থা। কিন্তু তারপরও সংস্থার প্রধান নির্বাহী (এমডি) নাজিম উদ্দিন তনু কৌশলে গ্রাহকের ডিসেম্বর মাস থেকে মুনাফা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে দিয়ে আসছিলেন। কিছুদিন আগেও শহরের সরিষাহাটির মোড়ে একটি শাখা বন্ধ রাখা হয়। বন্ধ পাওয়ায় শাখার শত শত গ্রাহকরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। মুনাফা না পেয়ে কিছুদিন আগে ভুক্তভোগীরা বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনী সহ প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ করে।
খাঁস-নওগাঁ মহল্লা বাসীন্দা মোসতাক আহমেদ পাপ্পু বলেন, অসুস্থ মানুষ কাজ করতে পারিনা। কর্ম জীবনে সঞ্চিত ৫লাখ টাকা গত ৩ বছর আগে এ সংস্থায় রেখেছিলাম। মাসে ১০ হাজার টাকা মুনাফা পেতাম। যা দিয়ে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া সহ সংসারের খরচ মেটাতাম। গত দুই মাস আগে ৫০ হাজার টাকা তুলে নেয়া হয়। বাঁকী টাকা তুলে নিবে আজকাল দিবো বলে কালক্ষেপণ করছিল তনু। হঠাৎ করে অফিস বন্ধ করে সবাই উধাও হয়ে যায়। এমাসেও মুনাফা পাওয়া যায়নি। এখন সংসার চালাতে ঋনগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।
একই এলাকার গৃহবধু শারমিন বলেন, জমি বন্ধক রেখে গত এক বছর আগে এ সংস্থায় ৭লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম। মাসে দুই হাজার করে লাভ পেতাম। বেশ কিছু সংস্থা পালিয়ে গেছে। এসব দেখে টাকা তুলে নিতে চেয়েছিলাম। ডিসেম্বর মাসে সংস্থা থেকে টাকাও দিতে চেয়েছে। কিন্তু তার আগেই পালিয়ে যায়। এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছি।
নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা মামুনুর রশিদ মামুনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে। তাকে জিজ্ঞাবাদ করা হচ্ছে। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে।
তিনি আরো বলেন- মামুনুর রশিদ মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। আগে তিনি কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে সমবায়ের সাথে যুক্ত হন। তার কোন ব্যবসা বানিজ্য নাই। কোন যোগ্যতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনি জানেন না। এছাড়া কত টাকা সমবায়ে জমা আছে সেটাও জানে না। এমন একজন অশিক্ষিত মানুষ কিভাবে চেয়ারম্যান হতে পারে আর গ্রাহকরা কিভাবে এতো টাকা রাখতে পারে তা আমার বোধগম্য না।