রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাট
শীতের আগমনী বার্তায় নানান ধরনের ধোঁয়া উড়া গরম গরম বিভিন্ন পিঠায় জমে উঠেছে লালমনিরহাটের হাট-বাজার, ফুটপাত ও মহাসড়কের পাশে বসা পিঠার দোকানগুলো। ঠাণ্ডা হাতে গরম গরম পিঠা পুলিতে জমেছে বেশ আড্ডা।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় শীতের আগমন ঘটে অনেক আগেই। এর দাপট যেমন দীর্ঘ হয়, অনুরূপ দীর্ঘস্থায়ী হয় শীতকাল। শীতের আমেজে মানুষের দৈনন্দিন কাজ-কর্মের মতই পরিবর্তন ঘটে রুচি আর পোশাকেও। বাঙালী জাতি বরাবরই ভোজন প্রিয়। সে থেকেও পিছিয়ে নেই এ জেলার মানুষ। শীতের হরেক রকম পিঠা-পুলি বাঙালীর প্রিয় খাবার। যা শীতকালে হাট-বাজার, গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত ও মহাসড়কের পাশেও জমে পিঠা-পুলির আড্ডাখানা। আবার দেখা যায়, রাস্তার পাশে কয়েকটি পয়েন্টে ভ্যানের মধ্যে গ্যাসের চুলা, সিলিন্ডার ও পিঠা তৈরির উপকরণ নিয়ে দুপুরের পরপরই হাজির হন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। রিকশাচালক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক, ছোট বড় সব শ্রেণিপেশার মানুষ এ মৌসুমী পিঠা দোকানের ক্রেতা। এটি মূলত শীতের মৌসুমের ব্যবসা। এ ব্যবসা চলবে প্রায় ৫-৬ মাস। বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন তাঁরা। প্রতি বছর এই শীতকালে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের প্রায় ১শত কিলোমিটার পথে বসে অসংখ্য পিঠা-পুলির দোকান। এবারও এর ব্যর্তয় ঘটেনি। যাত্রাপথে একটু দাঁড়িয়ে ক্লান্ত পথিকরাও যুক্ত হন শীতের পিঠা-পুলির আড্ডায়। হাট-বাজার, ফুটপাত বা মহাসড়কের পাশে এভাবে নানান ধরনের পিঠা-পুলি বিক্রি করে সংসারের চাকা সচল রাখেন হাজারো মৌসুমী হকার ও ব্যবসায়ীরা।
সদর উপজেলার মেডিকেল মোড়, বিডিআর গেট, নোয়াখালী মোড়, আলোরুপা মোড়, মিশন মোড়, হাড়িভাঙ্গাসহ মহাসড়কের আদিতমারী উপজেলার স্বর্ণামতি সেতুপাড়ে, বুড়ির বাজার, রেল স্টেশনসহ কালীগঞ্জের তুষভান্ডার বাজার, রেল স্টেশনসহ হাতীবান্ধার দৈখাওয়া রোড, মেডিকেল মোড়, উপজেলা গেটসহ পাটগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বসেছে পিটাপুলির দোকান। ধোঁয়া উড়ানো দোকান গুলোয় তৈরি হচ্ছে ভাপা পিঠা, তেল পিঠা, চিতু পিঠা, পুলি পিটা, ডিমপিটা, নারিকেল পিটাসহ চিংড়ি মাছে চপ, ধনে পাতার চপ, আলুর চপসহ ও নানান ধরনের ভর্তা দিয়ে পিঠা পরিবেশন করা হয়। শীতের ঠাণ্ডায় পিঠার মিষ্টি ঘ্রাণে মন হয়ে যায় মাতোয়ারা।
স্হানীয় বাসিন্দা আতিকুর রহমান, লিয়াকত আলী, আল আমিন ও সুজন চন্দ্র জানান, শীত আসলেই পিঠা ছাড়া আড্ডা জমে না। গাড়ি থেকে নেমে ঠাণ্ডা হাতে গরম গরম পিঠা খেতে ভারি মজা। পিঠা ছাড়া শীতকাল ভাবাই যায় না। তাই কাজ শেষে সন্ধা হলেই ছুটে আসি পিঠা আড্ডা খানায়। অনেক সময় ভোক্তাদের ভিড়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়, তবে দাঁড়িয়ে থাকলেও পিঠার স্বাদ নেওয়ার লোভ সামলানো অসম্ভব।
সাধারণ শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার (৩২) বলেন, ঝামেলা ছাড়াই স্বল্প দামে হাতের নাগালেই এখন পিঠা পেয়ে যাচ্ছি । তাই প্রায় সময় আমি ও আমার ফ্রেন্ডদের নিয়ে এখানে পিঠা খেতে আসি। পরিবারের সবার জন্য পিঠা নিয়ে যাই। পড়াশুনা ও টিউশনির জন্য ব্যস্ত থাকতে হয় এ কারণে পিঠা তৈরি করার সময় পাইনা । তাইতো এ দোকান গুলোতে খেতে আসি।
পিঠা দোকানে আসা ট্রাকচালক আলাউদ্দিন বলেন, সন্ধ্যা নামলে শীতের প্রকোপ বেড়ে যায়। ফলে ঠাণ্ডায় হাত শীতল হয়ে যাওয়ায় স্টিয়ারিং ধরে রাখাও কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই প্রায়ই সময় পথে ট্রাক দাঁড় করিয়ে গরম গরম ভাপা ও চিতই পিঠা খেয়ে শরীরটা কিছুটা তাপিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করি।
শহরের মিশন মোড় স্টেশন রোডের পিটা দোকানদার মোঃ কায়েস (৫৫) বলেন, আমার এই দোকানে ১০/১২ জন লোক কাজ করি, প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। এই দোকান দিয়ে আমারসহ ১০/১২ টা সংসার চলছে। তিনি প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই পিঠা বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে তার পিঠা দোকানে কয়েকজন কর্মচারী রয়েছেন যাদের কেউ পিঠা বানানো আবার কেউ ক্রেতাদের পিঠা পরিবেশনের কাজে ব্যস্ত।
পিঠা বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, শীতের সকাল ও বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। বাড়িতে পিঠা তৈরির সরঞ্জাম প্রস্তুত করেন আমার স্ত্রী। আমি দিনভর বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি বিক্রি করি। দৈনিক ৫-৭ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করে ৭ থেকে ৮শ’ টাকা আয় হয়। এই আয় দিয়ে তিন ছেলে-মেয়ের লেখাপড়াসহ ৬ সদস্যের সংসার খরচ চালাই। সন্ধ্যায় বিক্রি বেড়ে যায়। তখন দোকানে ভাই-ভাতিজারা সহযোগিতা করেন। দীর্ঘ ৫-৭ বছর ধরে শীত এলেই পিঠা বিক্রি করছি।