সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
পহেলা ফাগুন ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন শুক্রবার । প্রভাতের নবীন ঊষা বাংলার প্রকৃতিতে ঋতুরাজের দোলা নিয়ে আসলো। নবযৌবনের প্রতীক বসন্তকাল।
পল্লিকবির ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি এক রকম, আধুনিক কবির ভাব ও আবেগের প্রকাশভঙ্গি আরেক রকম। যে যেভাবেই বলুক, বসন্ত বয়ে আনে নতুনের বার্তা। পুরোনো, জরা, প্রাণহীনতাকে পরিত্যাগ করার ঘোষণা থাকে বসন্তের বাতাসে। গাছের পুরোনো পাতা ঝরে পড়ে। বনের ভেতর থেকে হঠাৎ হঠাৎ ডেকে ওঠে কোকিল। উতলা মন প্রাণের মানুষকে খোঁজে।তবে এটা ঠিক, প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটেছে। ৫০ বছর আগের মতো বনে বনে ফাগুনে আজ আর কোকিল ডাকে না। পলাশ, শিমুল ও মান্দার বৃ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। সেসব গাছের ডালে থোকা থোকা রক্ত চোখে পড়ে না। আমগাছও কমে গেছে। আমের মুকুলের সোঁদা গন্ধে চারদিক ম-ম করে না। কবিগুরু যখন জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ লিখেছিলেন, তখন ফাগুনে আমের বনের ঘ্রাণে পাগল করত।
জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটলেও ফাগুন মাসটা তো আছে। চিরকাল থাকবে। ভালোবাসার মাস। নর-নারীর বিশেষ করে যুবক-যুবতীর নির্মল ভালোবাসা স্বর্গীয় ব্যাপার। তার মধ্যে পাপের লেশমাত্র নেই। কোনো তরুণী যদি তার ভালোবাসার মানুষটির হাতে একটি ফুল তুলে দেয়, তাতে পাপ নেই। যুবকটি যদি তার প্রিয়তমার নিবিড় কালো খোঁপায় একটি সাদা গোলাপ গুঁজে দেয়, তাতে দোষ নেই।
প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা এ দেশের অসংখ্য নদী বিধৌত জনপদের কূলে কূলে যে সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে তার মধ্যে নিসর্গের রূপে সংস্কৃতির পালাবদলও ঘটেছে। বৈশাখ থেকে ফাগুন শুধুমাত্র ঋতু বৈচির্ত্য হিসেবে ধরা দেয় না এদেশের উৎসবপ্রবণ মানুষের মাঝে বরং সংস্কৃতির নব বাতায়নও খুলে দেয়। যান্ত্রিক এই শহরের নাগরিকরা রূপের ঋতু ফাগুনকে নিয়ে অন্তহীন প্রেমের পক্তি রচনা করে। ফাগুন আজ বাঙালির নব জাগরণের, প্রণোদনার সংস্কৃতি হয়ে ওঠেছে। প্রকৃতিতে যেমন হলুদের ছোঁয়া ক্রমশই বৃদ্ধি পায় ফাগুনে তেমনি নাগরিক পোশাকও রঙ বদলায় ফাগুনের রঙে।