বেরোবি প্রতিনিধি:
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা স্নাতক চূড়ান্ত বর্ষের ফলাফল প্রকাশে অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। অভিযোগ উঠেছে, বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তাজুল ইসলামের খাতা মূল্যায়ন ও নম্বর জমা দিতে গড়িমসির কারণে ফলাফল আটকে আছে, যা শিক্ষার্থীদের এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, চার বছরের স্নাতক কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গণিত বিভাগের এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাঁচ বছরেও স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগের মধ্যে বেশিরভাগ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে অনার্স শেষ করে মাস্টার্সের পথে থাকলেও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনো স্নাতক সম্পন্ন করতে পারেননি, যা তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী দায়িত্ব গ্রহণের পর সেশনজট নিরসনে দ্রুত সেমিস্টার সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। তিনি বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে সাড়ে চার মাসের মধ্যে সেমিস্টার শেষ করার নির্দেশনা দেন। তবে পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফল হাতে পাননি, যার জন্য মূলত অধ্যাপক তাজুল ইসলামের অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন তারা।
পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত এবং বিলম্বের কারণ:
পরীক্ষা পরিচালনার জন্য গণিত বিভাগের অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র রায়কে প্রধান করে একটি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়, যার অন্যান্য সদস্য ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন ও সহকারী অধ্যাপক মোসা. জেসমিন নাহার। এই কমিটি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব পরীক্ষা শেষ করা হয়। পরিকল্পনা ছিল, এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
কমিটির অন্যসব সদস্য সময়মতো খাতা মূল্যায়ন করে নম্বর জমা দিলেও অধ্যাপক তাজুল ইসলামের হাইড্রোডায়নামিক্স কোর্সের খাতা এখনো জমা পড়েনি। নিয়ম অনুযায়ী, চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্ট নম্বর (ইনকোর্স, মিড, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি) প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক হলেও তিনি তা করেননি।
ক্লাস ও পরীক্ষার অনিয়মের অভিযোগ:
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি কোর্সে কমপক্ষে ৩০টি ক্লাস নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও অধ্যাপক তাজুল ইসলাম মাত্র ১৩-১৪টি ক্লাস নিয়েই কোর্স শেষ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল বিলম্বিত করার ফলে শিক্ষার্থীরা চাকরির আবেদনেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তারা ব্যক্তিগতভাবে অধ্যাপক তাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উপাচার্য যোগদানের পর থেকে অধ্যাপক তাজুল ইসলাম অধিকাংশ সময় উপাচার্যের দপ্তরে কাটাচ্ছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, “আমি ওদের পরীক্ষা শেষ করেই শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম, খাতা মূল্যায়ন করতে সময় লাগবে।”
এদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. তানজিউল ইসলাম জীবন জানান, “এই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও পরীক্ষা কমিটির অধীন, তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।”
শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে তাদের এই জটিলতা নিরসন করা হোক, যাতে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি কত দ্রুত সমাধান করতে পারে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
Leave a Reply