নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাসসহ আশপাশ এলাকা। সংঘর্ষের পর থমথমে কুয়েট, ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্র ও ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৫০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির একে অপরকে হামলার জন্য দায়ী করছে।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া বিকেল ৬টা পর্যন্ত চলে। তথ্যমতে জানা যায়,ছাত্র শিবির ও ছাত্র দলের ক্যাডাররা প্রথমে সাধারণ ছাত্রদের ওপর অতর্কিতর জেরে হামলা চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী অসাধারণ ছাত্রের উপর। ঘটনার ক্রমে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাসসহ আশপাশ এলাকা। এতে একজন শিক্ষকসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের কুয়েটে মেডিক্যাল সেন্টার ও খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ আশপাশের বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে ক্যাম্পাসের বাইরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষ দর্শীরা আরো জানায়,দুপুরে শিক্ষার্থীরা ‘ছাত্র রাজনীতি ঠিকানা, এই কুয়েটে হবে না’, ‘দাবি মোদের একটায়, রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস চাই’, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না, ছাত্র রাজনীতির ঠিকানা’— সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলগুলো প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। সবশেষ ক্যাম্পাসের সীমানা পেরিয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। এসময় কুয়েট পকেট গেট থেকে বহিরাগতরা একটি গ্রুপের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে যোগ দেয়। এতে সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়।
ক্যাম্পাসের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার তারা ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করে। এর জেরে মঙ্গলবার সকালে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। পরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। বেলা ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
সংঘর্ষে কুয়েটের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস, খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন, শিক্ষার্থী আখেরুল ইসলাম, তানভীর হায়দার, খুলনা মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব জাহিদুল ইসলাম, জেলা কমিটির আহবায়ক তাসনিম আহমেদ, রাতুলসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
কুয়েটের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ভিসির কাছে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাদের হুমকি দেয়। তারা সিনিয়রদের লাঞ্ছিত করে। আমরা ভিসির কাছে এই বিচার দিয়ে বের হয়ে আসার পর বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়।
কুয়েটের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম বলেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে ভিসির কাছে গেলে ছাত্রদলের ছেলেরা আমাদের হুমকি দেয়। তারা সিনিয়রদের লাঞ্ছিত করে। আমরা ভিসির কাছে এই বিচার দিয়ে বের হয়ে আসার পর বিনা উস্কানিতে আমাদের ওপর হামলা চালায়।
খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইশতিয়াক আহমেদ ইশতি দাবি করেন, প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র শিবিরের ক্যাডাররা প্রথমে সাধারণ ছাত্রদের ওপর অতর্কিতে হামলা করে। পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিলে তারা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা চালায়। ছাত্রশিবির এই হামলা করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন ছাত্রলীগে ভরে গিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরাফাত হোসাইন মিলন বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর শিবিরের হামলার অভিযোগ হাস্যকর একটি ব্যাপার। কুয়েটের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আজ (মঙ্গলবার) সারাদিন শহিদ হাদিস পার্কে জামায়াতে ইসলামীর প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে বলে শুনেছি। আমরা হামলার নিন্দা ও জড়িতদের বিচার চাই।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাছুদ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বলেন, আমি আহত ছাত্রদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে রয়েছি। তবে পরিস্থিতি ভালো না। ক্যাম্পাসে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।
খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আছেন।
Leave a Reply