রাসেল ইসলাম, লালমনিরহাটঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে লাথি মেরে গর্ভপাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ন্যায় বিচার চেয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
শনিবার (৮ মার্চ) রাতে হাতীবান্ধা থানায় আওয়ামীলীগ নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন আহত গৃহবধূর শ্বশুর জোনাব আলী।
একই দিন সকালে হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বা সুইটি বেগমসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। আহত অন্তসত্ত্বা গৃহবধু সুইটি বেগম উপজেলার টংভাঙ্গা গ্রামের সাবু মিয়ার স্ত্রী। অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম একই গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। তিনি উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি। স্থানীয় সাবেক এমপি’র ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্থকর্মী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অন্তসত্ত্বা গৃহবধূ সুইটি বেগমের বাড়ির পাশের তার শ্বশুর-চাচা শ্বশুরদের নামীয় ২৬ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধ একই গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের। জমিতে চাষাবাদ করত সুইটি বেগমের চাচা শ্বশুর জোনাব আলী। শনিবার সকালে হঠাৎ দেশি অস্ত্রসহ দলবল নিয়ে সেই চাষাবাদ করা জমি জবর দখল করতে ঘর উঠাতে যায় আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম। এতে বাঁধা দিলে জোনাব আলী ও তার স্ত্রীকে রোসনা বেগমকে এলোপাতারী ভাবে মারপিট শুরু করে সিরাজুলের লোকজন। তাদেরকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন জোনাব আলীর ভাতিজা শহিদুল, নাতি রাজবাবু ও ভাতিজি বউ সুইটি বেগম। হামলাকারীরা তাদেরকেও মারপিট করে রক্তক্ত জখম করে। এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। এ সময় আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুলের লাথিতে গুরুতর আহত হন অন্তসত্ত্বা গৃহবধু সুইটি বেগম। এতে তার প্রচন্ড বেগে রক্তপাত শুরু হয়। স্থানীয়রা ছুটে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে আহতদের প্রথমে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে অন্তসত্ত্বা গৃহবধূর গর্ভজাত সন্তানকে বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিন রাতেই সুইটি বেগমসহ আহতদের ৪ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ট করে চিকিৎসকরা। সেখানে মৃত্যুর শয্যায় আছে ৮ মাসের অন্তসত্ত্বা গৃহবধু সুইটি বেগম।
এ ঘটনায় অন্তসত্ত্বা গৃহবধু সুইটি বেগমের শ্বশুর জোনাব আলী বাদি হয়ে শনিবার রাতে ৯ জনের বিরুদ্ধে হাতীবান্ধা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে।
সুইটি বেগমের স্বামী সাবু মিয়া বলেন, সিরাজুলরা আওয়ামীলীগের আমলেও মানুষের উপর অত্যাচার করেছে। এখনও তারা চোরাগুপ্তা ভাবে হামলা চালাচ্ছে। সিরাজুলের লোকজন জোনাব চাচা ও চাচিকে পিটাচ্ছিল। তাদের কবল থেকে বাঁচাতে আমার বউ সুইটি বেগম এগিয়ে যান। তাকেও পেটে লাথি মারে সিরাজুল। আমার ৮ মাসের অন্তসত্ত্বা স্ত্রী সুইটি বেগমের এখন পর্যন্ত রক্তপাত সম্পুর্ন ভাবে বন্ধ হয়নি।
মামলার বাদি জোনাব আলী বলেন, আমার চাষাবাদ করা জমিতে তারা বেড়া নির্মাণ করতে গেলে বাঁধা দেই। এতে সিরাজুল ও তার বাহিনী আমাদের ৫ জনকে বেধরক মারপিট ও রক্তাক্ত জখম করেছে। সিরাজুলের লাথিতে অন্তসত্ত্বা ভাতিজি বউ সুইটি এখনো অসুস্থ। ন্যায় বিচার চেয়ে থানায় মামলা করেছি।
অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, আমি লাথি মারিনি। তারা মিথ্যে অভিনয় করছে। আমাদের জমি আমরা বেড়া দিতে গেলে তারা বাঁধা দিয়েছে। তখন একটু হট্টগোল হয়েছে। ভিডিও আছে। তারাও আমাদের মারপিট করেছে।
হাতীবান্ধা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুন্নবী বলেন, দুই পক্ষই অভিযোগ দায়ের করলে দু’টি অভিযোগই নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অন্তসত্ত্বা গৃহবধূ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
Leave a Reply