সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
রাজশাহীর অন্যতম প্রাচীন শিব নদ কে কেন্দ্র করে এর পাড়ে পাল আমলের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। আশির দশকেও এই নদে লঞ্চ চলাচল করেছে। পণ্য পরিবহনে এবং তীরের উর্বর পলিমাটি এ অঞ্চলের ফসল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে দখলে-দূষণে নদের ধারাটি মৃতপ্রায়। এখন এই নদের পানি প্রবাহ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে হালকা বৃষ্টিতে বন্যা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, ফাল্গুন চৈত্র মাসে নদটির পানি শুকিয়ে যায় আবার কোথাও কোথাও হাঁটু সমান পানিতে পরিনত হয়। ফলে, নদের পানি ব্যাবহার করে গড়ে উঠা কৃষি ফসলি জমি অনাবাদি বা পতিত থাকার আশঙ্কা দেখা গেছে।
শিব নদের উৎপত্তি নওগাঁর মহাদেবপুর এলাকায়। শিব নদ আত্রাইয়ের একটি শাখা। অনেক নদ-নদীর নাম দেবদেবীর নাম থেকে হয়েছে। তাই হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা শিবের নামানুসারে এই নদের নাম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। শিব নদ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর শেষাংশ বারনই ৫৫ কিলোমিটার হবে। নদের প্রবাহ তানোরের বিলকুমারী বিলের ভেতর দিয়ে কালিগঞ্জ অতিক্রম করে পবা থানার বাগধানীতে এসে জামদহ নদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বারনই নাম ধারণ করেছে। বারনই রাজশাহীর প্রাচীন নদীবন্দর নওহাটা, মোহনগঞ্জ, তাহেরপুর হয়ে চলনবিলে প্রবেশ করে মূল আত্রাইয়ে পড়েছে।
১৯৮২ সালেও রাজশাহীর পবার প্রাচীন নদীবন্দর নওহাটা থেকে প্রতিদিন শিব নদ হয়ে লঞ্চ চলাচল করত। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ ছিল। তানোরে উৎপন্ন ফসল এই পথেই পরিবহন করা হতো। এই নদের ভাটির অংশ পান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এ পথেই পান নলডাঙ্গা হয়ে ট্রেনে করে ব্রিটিশ আমলে উত্তর প্রদেশে চলে যেত। সেখান থেকে রাজশাহীর পান ট্রেনে রংপুর-দিনাজপুরে যায়। এই নদের ভাটিতে রামরামা গ্রামে রাজা কংস নারায়ণের প্রাচীন দুর্গামন্দির ও রাজপ্রাসাদ ছিল।
জানা যায়, ষাটের দশকের শুরুতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় জনগণ মান্দা উপজেলার বৈদ্যপুরে একটি বাঁধ নির্মাণ করে নদের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এখন আর আত্রাইয়ে বন্যার প্রবণতা নেই। এখন শিব নদে শুধু বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়। নদটি দখল-দূষণ ও ভরাটের ফলে ফাল্গুন চৈত্র মাসে পানি থাকে না, ফলে পানি না থাকায় কৃষকরা বোরো চাষ করতে পানি সংকটে পড়ছে দীর্ঘদিন যাবত। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ গর্ভস্থ পানি লেয়ার প্রতিনিয়তই নিচে নামছে, সুপ্রেয় পানির ঘাটতি দেখা গেছে তানোর এর মুন্ডমালা পৌরসভায়। এমন পরিস্থিতিতে ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের জন্য নিরুউৎসাহিত করেছে বিএমডিএ।
তবে, নদীটির পানি ব্যবহার করে দেশের কৃষিক্ষেত্র কে সচল রাখতে নদীটি খনন জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে। নদীর নাব্যতা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে হালকা বৃষ্টিতে বন্যার সৃষ্টি হয়, আবার ফাল্গুন চৈত্র মাসে নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। ফলে নদীর পানির উপর নির্ভরশীল বোরো ফসল সহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন হুমকির মুখে পড়ে। দ্রুত নদী খনন ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে হাজার হাজার একর জমি পতিত থাকার সঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নদটির সাথে যুক্ত খাড়ি খননের উদ্যোগ গ্রহন করলেও মূল নদটি খনন ও রক্ষার জন্য কতৃপক্ষের নজরে আসে নি। মূল নদ পানি শূন্য হওয়াতে খাড়ি খনন প্রকল্প কৃষকদের কোনো উপকারে আসে নি বলে জানা যায়। দ্রুত শিব নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকরা।
Leave a Reply