সোহেল রানা,রাজশাহী,প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরসহ প্রচন্ড খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রায় দু’সপ্তাহ থেকে বয়ে চলছে তাপ-প্রবাহ। এতে বাগানগুলোতে ব্যাপকভাবে আমের গুটি ঝরে পড়ছে। ফলে আমের কাঙ্খিত ফলন নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই আশা-আশঙ্কার মধ্যেই আম চাষিরা আমের গুটি রক্ষায় বাগানে বাড়তি যত্ন নিতে শুরু করেছেন।
কৃষি বিভাগ বলছে, তাপপ্রবাহে রাজশাহী অঞ্চলের আমগাছগুলোতে গড়ে ২০ শতাংশ গুটি ঝরে পড়েছে। এই অবস্থ্য আর টানা এক সপ্তাহে চললে বরেন্দ্র অঞ্চলে আমের মুকুল অনুযায়ী এবার ফলন অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে। এমনিতেই এবার আমের অনইয়ার চলছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের জেলাগুলোতে আমের বাম্পার ফলন হওয়ায় কথা। গত বছর ছিল ‘অফইয়ার’। ফলন ভালো হয়নি। এবার মুকুল আসার পর থেকে কাঙ্খিত বৃষ্টির দেখা পাননি বাগান মালিক ও চাষিরা। দিনের বেলায় রোদের তাপে ঘর থেকে বের হওয়াটাও ঝুঁকির। ঘর থেকে বের হলেই সূর্যের তীব্র তাপ গায়ে আগুনের হলকার মতো বিধে। তাপপ্রবাহে বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীর মাঠঘাট-জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। বিলগুলো খাঁ খাঁ করছে পানির অভাবে। পাশাপাশি বাতাসের
আর্দ্রতা কমেছে। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে আমের গুটি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি সেচ ও কীটনাশক দিয়েও আমের গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না। চাষিরা জানান, রোদের কারণে আমের গুটি ঝরে পড়ে। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ও তাপপ্রবাহে অনেক বাগানে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ গুটি ঝরে গেছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার আম চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, তার ৪টি আম বাগান ইজারা নেয়া
আছে। প্রতিটি গাছে এবার আমের মুকুল ভালো এসেছে। গতবারের থেকে আমের গুটিও এসেছে বেশি। কিন্তু রোদ আর গরমে সেই গুটি মারাত্মকভাবে ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় পানি ও ওষুধ দিয়েও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না।
রাজশাহীর পবা উপজেলার আমচাষি মাজেদুল ইসলাম বলেন, আমের জন্য এ সময়ে বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে গুটি ঝড়া বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু সেই বৃষ্টির দেখা নাই। এতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি গুটি ঝরছে। আমের ফলনও
গতবারের চেয়ে এবার অর্ধেক হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার নামাজ গ্রামের আম চাষি আকবর হোসেন বলেন, তার ছয়টি বাগানে ৯০টি আমের বড় গাছ আছে। প্রতিটি গাছে এবার আমের মুকুল ভালো এসেছে। ফলে গতবারের চেয়ে আমের গুটিও এসেছে ভালো। কিন্তু রোদ আর গরমে সেই গুটিও ব্যাপক হারে ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়ায় পানি ও সেচ দিয়েও গুটি ঝরা রোধ করা যাচ্ছে না।
রাজশাহী কৃষি অঞ্চলের তিন জেলা রাজশাহী, চ-পাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলায় চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে।
এছাড়া নাটোর পাবনা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ ও
বগুড়া জেলায় আরো ৫ হাজার ৪৭৮ হেক্টর জমি আম চাষের আওতায় এসেছে। সবচেয়ে বেশি ৩৮ হাজার ৬০৮ হেক্টর আমবাগান রয়েছে চ-পাইনবাবগঞ্জ জেলায়। রাজশাহী অঞ্চলের এই পরিমাণ বাগান থেকে চলতি মৌসুমে সাড়ে ১১ লাখ টন আম উৎপন্ন হবে বলে কৃষি বিভাগের আশা। এই পরিমাণ আমের বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি ঝরে পড়ছে। এ কারণে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বাগান মালিক ও চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে গুটি টিকিয়ে রাখতে।
এবিষয়ে রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম জানান, গত ২২ মার্চ থেকে রাজশাহী অঞ্চলে বয়ে চলেছে মৃদু তাপ-প্রবাহ। গড় তাপমাত্রা ২৮-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেটাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। ৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। একইভাবে ৩৮-৪০ ডিগ্রিকে মাঝারি ও ৪০-৪২ ডিগ্রিকে তীব্র তাপদাহ এবং ৪২ এর উপরে গেলে সেটাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে। গত
২৮ মার্চ রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত ১ এপ্রিল রাজশাহী অঞ্চলের ৩৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। সবশেষ গত ৫ এপ্রিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও গত ৬ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কয়েকদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে তাপপ্রবাহ আরও তীব্র হবে। সেক্ষেত্রে গড় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করতে পারে।
Leave a Reply