মাসুদ রানা,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি;
চলছে গ্রীষ্মকালের শেষ সময়। বসন্তের শীতকালের অতিথি পাখি এই গ্রীষ্মের শেষেও যেন ডানা মেলেছে মন-প্রাণ খুলে। সবুজ পাতার ওপর পাখা গুটিয়ে বসে আছে সাদা-কালো নানা রকম বাহারি পাখি। দূর থেকে দেখে মনে হবে, যেন সাদা ফুল ফুটেছে। প্রায় প্রতিটি গাছেই রয়েছে এমন পাখির ঝাঁক। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখে মনে হয় যেন এক পাখিরাজ্য। প্রকৃতি ও পাখিদের এমন চোখ ধাঁধানো দৃশ্য ও পাখিদের অবিরাম কিচিরমিচির শব্দ কানে আসবে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ৫নং ভাবকী ইউনিয়নের কুমুরিয়া গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়ী।
পাখিপ্রেমী মহুরম ছফি উদ্দিন মন্ডল ও হযরত আলী এবং ভাবকী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহুরম নজরুল হক শাহ্ বহু যুগ ধরে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলেছেন।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সারা বছর পাখিদের আসা-যাওয়া এই চেয়ারম্যান বাড়ীতে। কোনো উৎপাত নেই, কেউ বিরক্ত করে না। তাই দূরদেশ থেকে আসে পরিযায়ী পাখিও।
সারাদেশে যখন পাখি শিকারের মহোৎসব চলে, ঠিক তখন চেয়ারম্যান বাড়ির চিত্রটা ঠিক তার উল্টো। তাই নিরাপদ আশ্রয়ে জানুয়ারি থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসে হাজার হাজার পাখি। ছয় মাস থেকে যায় এই নিরাপদ আশ্রয়ে। দীর্ঘ যুগ ধরেই এখনো অসংখ্য গাছ ও বাঁশঝারে আশ্রয় নেয়া অথিতি ও দেশী পাখি। পাখির কলকাকলিতে মুখর চেয়ারম্যানের বাড়ীর এলাকা।
চেয়ারম্যান বাড়ীর চারপাশে আমাদের প্রায় ৫৫ বিঘা জমির উপর সবুজ ছায়া ঘেরা হাজারো গাছ ও হাজারো বাঁশঝারে দীর্ঘ যুগ ধরে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে বেচে নিয়েছে।
প্রতি বছর শীতকাল জুড়ে অতিথি পাখির দল ঝাঁক বেঁধে হাজির হতে থাকে এই চেয়ারম্যান বাড়ীর গাছ ও বাঁশঝারে। অসংখ্য গাছে রঙ-বেরঙের শত শত বক, পানিকৌরিসহ অন্যান্য পাখির ছুটোছুটি মন কেড়ে নেবে যে কারো। পাখিদের কিচির মিচির ক্ষণিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে ইট পাথরের জীবনের কথা।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো এখানে সকাল বিকাল হাজার হাজার পাখির দেখা মিলছে। এসব পাখি আশপাশের বিল ও ক্ষেত্রবাড়ী থেকে খাবার সংগ্রহ শেষে আশ্রয় নেয় চেয়ারম্যান বাড়ীর গাছ ও বাঁশঝারগুলোতে।
পাখিপ্রেমী জিকরুল হক শাহ্ জানান, আমার বাপ-দাদার আমল থেকে দীর্ঘ যুগ ধরে আমাদের এ বাড়িটি চারপাশ ঘিরে পাথিদের অভয়ারণ্য। প্রতি বছরই অতিথি পাখিমুখরিত থাকে বাড়ীর চারপাশ। এখানে দিনে রাতে সব সময়ই পাখিরা অবস্থান করে। প্রতি বছরে শীতকালে পাখিদের বিচরণ দেখা গেলেও এবার বসন্তের শুরুতে পাখিদের বিচরণ অনেক বেশি ছিলো এবং এখন পযন্ত অসংখ্য পাখি আছে। পাখির এই অভায়ারণ্য দেখতে ছুটে আসে পাখিপ্রেমীরা।
খানসামা উপজেলা পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান
জনবন্ধু এটিএম সুজাউদ্দিন শাহ্ লুহিন বলেন, প্রতি বছর জানুয়ারী শেষে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমণ ঘটে এবং জুলাই এর শেষের দিকে চলে যায়। তবে এবার এখন পযন্ত অসংখ্য পাখি আছে। তিনি আরো বলেন, বাপ- দাদার আমল থেকে দেখে আসছি আমাদের বাড়ির চারপাশে আমাদের নিজস্ব গাছ ও বাঁশ ঝারে এসব অতিথি পাখিরা অভয়ারণ্য হিসেবে আশ্রয় নেয়।
আমাদের বাড়ির চারপাশে আমাদের নিজস্ব গাছ ও বাঁশঝারে অতিথি ও দেশী পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়েছে। এই এলাকায় ভুলেও কেউ পাখি শিকারের কথা চিন্তা করে না। কিন্তু বিল বা জমিতে যখন পাখিরা খাবার আহরণে যায়, তখন দুষ্ট প্রকৃতির কিছু মানুষ পাখি শিকার করে। এটা বন্ধ করা গেলে পাখিদের আগমণ আরো বাড়বে।
আকতারুল বলেন, সাধারণত লোকালয়ে পাখিদের এমন অভয়ারণ্য দেখা যায় না এমনকি এটা বিরল। এই এলাকা সত্যিই অন্যরকম। কতটুকু পাখিপ্রেম থাকলে এটা করা সম্ভব তা বুঝতে পারছি না। আমিও ভালবাসার টানেই এখানে পাখি দেখতে এসেছি। অসাধারণ লাগছে পাখিদের এমন বিচরণ দেখে।
অতিথি ও দেশী পাখিদের রক্ষায় উপজেলার এই অভায়ারণ্যকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে গড়ে তোলার দাবি স্থানীয়দের। সেই সঙ্গে পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারিরও দাবি পাখিপ্রেমীদের।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন প্রধান বশির উল আলম মুঠোফোনে জানান, আসলে এটাতো মেসেজ দেওয়ার বিষয়। এই বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি যার কারণে সারা বাংলাদেশে আমাদের সংকট আছে। ঠিক আছে, আপনি অনেক ভালো একটা তথ্য দিয়েছেন, আমি বিষয়টা নিজে তদারকি করে দেখবো।
বার্তা প্রেরকঃ
মাসুদ রানা
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
Leave a Reply