সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওযামীলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকেই প্রার্থী হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে জানান দিচ্ছেন। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোয়ন পেতে দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক ও সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকুট, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ নোমান বখত পলিন, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের পিপি ড. খায়রুল কবির রুমেন প্রমুখ। তবে অপর দিকে জেলা বিএনপি’র কোন প্রার্থী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য নাম এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ১ জন চেয়ারম্যান, ১২ উপজেলায় ১২টি ওয়ার্ডে ১২ সাধারন সদস্য এবং মহিলাদের জন্য ১২টি ওয়ার্ডের ৪টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৪জন নির্বাচিত হওয়ার কথা রয়েছে। জেলার ৮৮টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বার এবং ১২ উপজেলার ১২জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ৪টি পৌরসভার ৪জন মেয়র, প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যরা ভোটার হিসেবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। তবে প্রার্থীরা তাদের ভোট দিতে পারবেন না। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ১৫ সেপ্টেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর এবং নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে ১৭ অক্টোবর ২০২২ইং তারিখে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে ইভিএমের মাধ্যমে। অবশ্য সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এই নির্বাচন ব্যালট পেপারে মাধ্যমে গ্রহনের দাবী জানিয়ে আসছেন। ইভিএমে হলে ভোটে অংশ নেবে না বলেও ইসিকে জানিয়েছে জাপা। ২০০০ সালে তৎকালীন সরকার নতুন করে জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। এরপর জোট সরকারের আমলে কোনো উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে জেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এরপর প্রথমবারের মতো স্থানীয় এই সরকারে নির্বাচন হয় ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সে সময় ৬১টি জেলায় (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) নির্বাচন হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ৪২০ ভোট পেয়ে বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ্ব নুরুল হুদা মুকটের কাছে। ঐ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দুই হেভিয়েট প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াই হয়েছিল এবং বিএনপি’ কিংবা জাতীয় পার্টি ঐ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও তেমনটাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলা পরিষদের মেয়াদ আরও আগেই শেষ হলেও আইন সংশোধনসহ অন্যান্য জটিলতার কারণে ভোট নিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। স্থানীয় এই সরকারের আইনটি সংশোধনের পর ১৭ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রশাসক বসানো হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় নির্বাচিত পরিষদগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছিল।
এ অবস্থায় জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের আগে প্রত্যেক জেলা পরিষদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অথবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি যোগ করে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী চলতি বছরের ৬ এপ্রিল সংসদে পাস করা হয়। এরপর সংশোধনীর গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল ১৩ এপ্রিল।
জেলা পরিষদ নির্বাচন আইনানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে যতগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর সদস্যরাই জেলা পরিষদ সদস্যদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতেন। অর্থাৎ পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, মহিলা কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বাররা ভোট দিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও মহিলা সদস্য নির্বাচিত করবেন। সংশোধিত আইনে জেলার প্রতিটি উপজেলাতে একজন করে সাধারন সদস্য, ৩টি উপজেলা নিয়ে একটি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে একজন করে মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন।
Leave a Reply