শিক্ষাই জাতীর মেরুদণ্ড, আর জীবনের উষালগ্নের শিক্ষাই প্রাথমিক শিক্ষা, যা শিক্ষিত ও মননশীল সমাজ বিনির্মানের মুল ভিত্তি বা সোপান।বাস্তব মূখী ও মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বলিষ্ট নেতৃত্বে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষিকাগণ নিরলস ভাবে কর্মরত আছি। প্রাথমিক স্তরের ২৯টি যোগ্যতা অর্জনের লক্ষে আমরা নবনব কৌশল,পদ্ধতি, নীতিমালা তৎসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করছি। এ মহৎ কাজে সহযোগিতা করছেন ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক,জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকেরা। করা হচ্ছে মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ। পাশাপাশি মিড-ডে মিল / দুপুরের আহারের ব্যবস্থা। ক্যাচমেন্ট এলাকার শতভাগ শিশুর ভর্তির বিষইয়টিও সফল। এত সব আয়োজনের মূল লক্ষ হল যুগোপযোগী ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য একটি বিষয় অতীব জরুরী বলে মনে হ্য়,তা হল কোমল মতি এই শিশু বিদ্যালয় ত্যাগের পর দীর্ঘ সময় তার বাড়িতে অবস্থান কালে তাকে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করা। চলা ফেরা, খেলাধুলা,পড়ালেখা, ঘুমান সহ সকল কর্মের মধ্যে শিশু থাকবে জ্ঞানের আলোতে, যা তাকে করে তুলবে জ্ঞান পিপাষু অনাগত এক এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ।মিশরীয় সাহিত্যিক তাই যথার্থই বলেছেন ‘মাতৃ কোঁড়ই শিশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়’। তাই শিশুর মা’কে সর্বাগে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা প্রয়োজন। ফলে তিনি শিশুর শিক্ষা, অশিক্ষার সুফল-কুফল উপলব্ধি করবেন।পুষ্টিজ্ঞানের সচেতনায় শিক্ষিত মা শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা,স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শিশুর দাঁত, নখ, পরিধেয় বস্ত্রাদি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বিশেষ ভাবে সচেতন থাকলে শিশু স্বাস্থ্যবান,বলিয়ান ও মানসিক ভাবে বিকশিত হয়ে উঠবে।সে নিজেই হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান ও সচেতন। প্রচলিত পদ্ধতিতে বছরে দু’একবার মা সমাবেশ করে শিশুর মায়েদের স্বশিক্ষিত করা, সচেতন করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি বিদ্যালয়ের অভিভাবিকা মায়েদের স্বশিক্ষিত করার জন্য মা সমাবেশের পাশাপাশি মাঝে মাঝে মায়েদের নিয়ে বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, নৈতিক শিক্ষার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। জাতীয় সমাবেশের মাধ্যমে মায়েদের উপস্থিতিতে শিশুদের সঠিক ভাবে দাঁত ব্রাশ করা, হাত পায়ের নখ কাটা, সহ গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা ইত্যাদি হাতে কলমে শিক্ষার আয়োজন করি তবে প্রতিটি মা ও সন্তান হবে সচেতন, স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নবান। মা সন্তানের নখ কাটা, দাঁত ব্রাশ করা, বড়দের সম্মান করা, ছালাম / প্রণাম করা সহ নৈতিক শিক্ষা দিতে ভুল করবেন না। ছোটদের স্নেহ করতেও মা শিশুকে শেখাবেন।যা পরিণত বয়সে তাকে একজন আদর্শ নীতিবান মানুষ হতে সহয়তা করবে। ফলে সে কখনো সন্ত্রাসী হবেনা, জীবন বিনাশী মাদকাশক্ত হবেনা, সুদখোর, ঘুষখোর ও চাদাবাজির মত নিন্দিত কর্ম করবেনা। সচেতন মা সকাল সন্ধায় তার আদরের সন্তানকে পড়ার টেবিলে বসাবেন। কর্মব্যস্ত পিতা জীবন জীবিকার তাগিদে ব্যস্ত থাকেন। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন মা’ই তার সন্তানকে পড়ার টেবিলে বসাবেন। স্বস্নেহে তাকে আদর করে পড়তে বলবেন, পড়াবেন, শেখাবেন। এমনি ভাবে সে হবে একদিন অধ্যবসায়ী পরিশ্রমি, বিনয়ী ও পড়ার প্রতি নিরালস আগ্রহী। সচেতন মায়ের সন্তান অবশ্যই শারীরিক, মানসিক,, সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাতিক ভাবে বিকশিত হবে। দেশ পাবে একজন আদর্শ দেশ প্রেমিক, নীতিবান, নৈতিকতার আলোতে পুষ্পিত এক জাতি। আধার বিদুরিত করে আলোর মশাল জালাবার এই মহান দায়িত্ব হাতে নেবেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আলোর দিশারী শিক্ষক সমাজ।
মোঃ ফেরদৌসুর রহমান সহঃ শিক্ষক কোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
Leave a Reply