নিউজ ডেস্ক :
পাবনার হিমাইতপুরের চাঞ্চল্যকর সাইদার হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও কিলিং মিশনে অংশগ্রহনকারী ছয় আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার স্বীকারোক্তিসহ ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে প্রদান করেছে গ্রেফতারকৃতরা। পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।
পুলিশ সুপার আরও জানান একদল দুস্কতিকারি গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে পাবনা পৌর আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য সাইদুর রহমান ওরফে সায়দার মালিথা (৫৫)কে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এ দিন দুপুর ১টার দিকে পাবনা সদর থানাধীন চর বাঙ্গাবাড়িয়া গ্রামে চার রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোকনুজ্জামানের নেতৃত্বে এসআই (নিরস্ত্র) অসিত কুমার বসাক, ডিবি পাবনা এবং সদর থানা পুলিশের উপর স্পেশালভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়। পুলিশের এই টীম, কিলিং মিশনে অংশ গ্রহনকারী আসামীদের গ্রেফতারের জন্য যৌথ ভাবে আভিযানে নামে। আভিযানিক দলটি আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কক্সবাজার, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।অবশেষে তারা কিলিং মিশনে অংশগ্রহনকারী ছয়জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো পাবনা সদর থানার গাফুরিয়াবাদ গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে আনোয়ার হোসেন স্বপন (৪২),একই থানার চক ছাতিয়ানি গ্রামের কালাম মালিথার ছেলে
আশিক মালিথা (২৮), আব্দুল হাকিম মালিথার ছেলে আলিফ মালিথা (২২), কাশিপুর গ্রামের শাজাহান খানের ছেলে রিপন খান (২৭), পাবনা শহরের গোপালপুর মাটে সড়ক মহল্লার আকবর হোসেনের ছেলে
নুরুজ্জামান রাকিব(২৪), ও একই মহল্লার রমজান আলীর ছেলে ইয়াসিন আরাফাত ইস্তি (২৬)।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে
হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড তাজা গুলি, একটি বার্মিজ টিপ চাকু,
ভিকটিমের উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেল, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ৩টি মোটরসাইকেল ও ১০টি সিমসহ পাঁচটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় ।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তারা পুলিশকে আরও জানায়, হিমাইতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মালিথা চেয়ারম্যান হওয়ার পর তার চাচাতো ভাই সাইদার মালিথা ও তার লোকজনের ৬০/৭০ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে ।
বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আলাউদ্দিন মালিথা হেরে গেলে উক্ত সম্পত্তি সাইদার মালিথা ও তার লোকজন পুনরায় দখলে নিয়ে চাষাবাদ করে। এসব ঘটনা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মাঝে মধ্যেই উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটতো।
হত্যাকান্ডের আগের দিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আলাউদ্দিন চেয়ারম্যানের ভাই সঞ্জু মালিথাকে হিমাইতপুর মন্ডল মোড়ে সাইদার মালিথার লোকজন মারধর করে। এতে আলাউদ্দিন মালিথা ক্ষিপ্ত হয়ে সাইদার মালিথাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তার বাড়ীতে এজাহার নামীয় আসামীদের ডেকে নিয়ে বৈঠক করার পর ভাতিজা আনোয়ার আহম্মেদ স্বপনের উপর সাইদারকে
হত্যার দায়িত্ব দেয়। এরপর আনোয়ার আহম্মেদ স্বপন উপরোক্ত আসামীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাইদার মালিথাকে তার নিকট থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি করে। অপর আসামীরা ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মোটর সাইকেল যোগে সকলেই সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত আনোয়ার আহম্মেদ স্বপনের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা সহ মোট ০৮ টি মামলা, মোহাম্মদ আশিক মালিথার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, চুরি,মাদকসহ ০৭ টি মামলা, নুরুজ্জামান রাকিবের বিরুদ্ধে মারামারি, হত্যা চেষ্টা, চুরি সহ ০৫টি মামলা, আলিফ মালিথার বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যা চেষ্টা সহ ৩টি মামলা রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান পুলিশ সুপার।
Leave a Reply