নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম-১০ আসনের নবনির্বাচিত এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে ইসির মামলা। নিজ নির্বাচনী এলাকায় চাঁদা বা অনুদানের চেকে ফাঁসলেন উল্টো নিজেই। নির্বাচনী বিধিমালা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে। নিজ নির্বাচনী এলাকায় অনুদানের চেক দিয়ে উল্টো মামলায় ফাঁসলেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি-৩ ধারার লঙ্ঘনে। আদালত বাদীর মামলাটি গ্রহণ করে আসামিকে হাজির হতে সমন জারি করেছেন। নির্বাচনের আগে সিইসি থেকে যে মামলা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো তা আজকে কার্যকর ও তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মসজিদ,মন্দির ও প্যাগোডায় অনুদানের চাঁদা-চেক বিতরণ করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইসির নির্দেশনায় চট্টগ্রামের ১৬ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমানকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিল। এখন ১০ আসনের নবনির্বাচিত এমপির বিরুদ্ধে মামলা ব্যাপক আলোচিত হয় জনতার মাঝে। যা আবারো আলোচিত হলো চট্টগ্রামবাসী,গণমাধ্যম, প্রিন্ট পত্রিকা,সোশ্যাল মিডিয়া ও দেশজুড়ে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিক পদক্ষেপের সক্রিয়তায়।
——————
আজ১৬জানুয়ারি,মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাং সালাউদ্দিনের আদালতে নগরের ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
চট্টগ্রাম ১০(ডবলমুরিং,খুলশী,পাহাড়তলী) আসনে জয়ী নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাদীর আইনজীবী জাহেদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, চেক বিতরণে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা ২০০৮-এর বিধি-৩ ধারার লঙ্ঘন হয়েছে। তাই আদালত বাদীর মামলাটি গ্রহণ করে আসামিকে হাজির হতে সমন জারি করেছেন। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগে ৪ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার উপসচিব মো. আবদুছ সালামের সই করা চিঠিতে নগরের খুলশী থানার নির্বাচন কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আচরণবিধিমালার ৩ ধারা অনুসারে, কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষ থেকে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনপূর্ব সময়ে কোনো ব্যক্তি,গোষ্ঠী বা কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে চাঁদা বা অনুদান দিতে বা দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না। মহিউদ্দিন বাচ্চু এলাকার মসজিদে অনুদানের চেক বিতরণ করেছেন বলে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে অভিযোগ করেছিলেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম। আফসারুল আমীনের মৃত্যুতে ফাঁকা হওয়া চট্টগ্রাম-১০ আসনে গত বছরের ৩০ আগস্ট হওয়া উপনির্বাচনে জিতে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন মহিউদ্দিন বাচ্চু। এবারের নির্বাচনেও তিনি নৌকার প্রার্থী হন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়,নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গত বছরের ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১০ আসনের সব মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের এক হাজার টাকা করে এবং মাদানী মসজিদে এক লাখ টাকা অনুদানের চেক দেন মহিউদ্দিন বাচ্চু,যা জুমার নামাজের খুতবার আগে মুসল্লিদের অবহিতও করা হয়। একইভাবে ২৪ ডিসেম্বর লালখান বাজারে তাঁর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় থেকে মসজিদগুলোর ইমাম, মুয়াজ্জিনদের ৬০ হাজার টাকা করে অনুদানের চেক দেন তিনি। এই ঘটনায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি অনুসন্ধান করে মোট ২১টি মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডা প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুদানের চেক বিতরণ করা হয় বলে জানতে পারে। পরে নির্বাচন কমিশন বরাবর সুপারিশ করা হয়। ৪ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন মামলা করার নির্দেশ দেয়।
অবশ্য অভিযোগ ওঠার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে ২ জানুয়ারি মতবিনিময় সভায় মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেছিলেন, ‘আমি দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি সাড়ে তিন মাসের কিছু বেশি। সংসদ সদস্য হিসেবে সরকারি অনুদান বিতরণের দায়িত্ব ছিল আমার।
সেসব চেক বিতরণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে। যে প্রতিষ্ঠান অনুদান পেয়েছে, তাদের কোনো একজন প্রতিনিধি সই করে সেই চেক নিয়েছেন। সেখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার বিষয় নেই।’
মামলার অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি না ধরায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গ:এর আগে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি নিজস্ব অনুসন্ধানে মোস্তাফিজুরের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের গালাগাল ও মারধর করে মাটিতে ফেলে দেওয়া এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে এই মামলায় জামিন নেন মোস্তাফিজুর। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে ইসি।এর আগে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইসির নির্দেশে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা করেছিলেন বাঁশখালী নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা।
Leave a Reply